• কাটোয়ায় শ্বশুরকে বাবা সাজিয়ে নথি তৈরি বাংলাদেশি জামাইয়ের, স্বীকার শুনানিতে
    বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে  শ্বশুরকে বাবা সাজিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছিলেন কেতুগ্রামের বাসিন্দা দুলাল মণ্ডল।  শুক্রবার শুনানির জন্য কাটোয়া মহকুমা শাসকের দপ্তরে ডাকা হয় শ্বশুর ও জামাইকে। কীভাবে ভারতের ভোটার তালিকায় নাম উঠল, আধার কার্ডই বা কীভাবে করল ওই ব্যক্তি, তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন। 

    কাটোয়ার এসডিও অহিংসা জৈন বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তদন্ত শুরু করেছি। কীভাবে ভোটার, আধার কার্ড তৈরি হল খতিয়ে দেখছি।

    কেতুগ্রাম-২ ব্লকের সীতাহাটি পঞ্চায়েতের উদ্ধারণপুরের বাসিন্দা কালাচাঁদ মণ্ডল আদতে বাংলাদেশের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। কালাচাঁদবাবু তাঁর মেয়ে সীমাদেবীর বিয়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে এসেছিলেন ২০০০ সালে। এরপর ২০১৫ সালে কালাচাঁদবাবুর মেয়ে, জামাই ও নাতি পাসপোর্ট ছাড়াই বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করে। এখানে এসে কেতুগ্রামের সীতাহাটি পঞ্চায়েতের নৈহাটি গ্রামে পাকাপাকি বসবাস শুরু করেন জামাই দুলাল মণ্ডল। দুলালবাবুর এক ছেলে ও দুই মেয়ে। অভিযোগ, দুলাল মণ্ডল ভারতে এসে শ্বশুরকে বাবা সাজিয়ে আধার, ভোটার, রেশন কার্ড সবই তৈরি করে নেন। দুলালবাবুর ছেলে দুর্জয় মণ্ডলও তার দাদু কালাচাঁদ মণ্ডলকে বাবা সাজিয়ে পরিচয় পত্র তৈরি করিয়ে নেয়। দুর্জয় বেঙ্গালুরুতে কাজ করেন। দুলাল মণ্ডল ২০১৫ সালে ভারতে কাগজপত্র তৈরি করিয়ে ২০২২ সালে ভারতে সপরিবারে অনুপ্রবেশ করে। 

    দুলালবাবু অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, বাংলাদেশে চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল আমাদের। আমার মাথা মেরে ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ আমার জমিজমা, ভিটেমাটি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল৷ বাধ্য হয়েই দালালকে মাথাপিছু এক হাজার টাকা করে দিয়ে ভারতে এসেছিলাম৷ এখানে এসেই শ্বশুরকে বাবা সাজিয়ে নথি তৈরি করেছিলাম৷ এখন আমাকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে হলে পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মরা ছাড়া কোনও উপায় নেই। এদিকে প্রশ্ন উঠছে ভারতে ভোটার, আধার কার্ড কীভাবে তৈরি হল৷ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন শুনানিতে এসে দুলালবাবু সন্তোষজনক কোনও নথি সরকারি অফিসারদের দেখাতে পারেননি৷ তাই এদেশের ভোটার তালিকা থেকে দুলালবাবুদের নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করল প্রশাসন৷ কেতুগ্রাম বিধানসভার ২৪৩ নম্বর পার্টের ভোটার তালিকা ধরে স্ক্রুটিনি করতে গিয়েই পর্দাফাঁস হয়৷ ভোটার তালিকায় দেখা যায় কালাচাঁদ মণ্ডলের বয়স রয়েছে ৬২ বছর। আর ওই একই পার্টের ভোটার তালিকায় জামাই দুলাল মণ্ডলের বয়স ৫৭ বছর। দুলালের পিতার নাম কালাচাঁদ মণ্ডল বলে উল্লেখ রয়েছে। বাবা ও ছেলের বয়সের ফারাক মাত্র ৫ বছর! এসব দেখে সরকারি অফিসাররাও তাজ্জব বনে যান। কালাচাঁদ মণ্ডলের বাড়ি ছিল বাংলাদেশের সরিয়তপুর জেলের গোঁসাইগঞ্জে। ওই জেলারই বাদাইগঞ্জে মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। 
  • Link to this news (বর্তমান)