বাঁকুড়ায় বনমহোৎসবে রোপিত গাছ উধাও, চুরি করা চারাও যত্ন করে লাগান, বার্তা বনদপ্তরের
বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: বনমহোৎসবে লাগানো ফলের চারা তিনদিনের মধ্যেই গায়েব হয়ে গেল বাঁকুড়ায়। গত মঙ্গলবার বাঁকুড়ার রবীন্দ্র ভবনে ঘটা করে জেলাস্তরের বনমহোৎসব পালন করা হয়। ওইদিন বাঁকুড়া স্টেডিয়ামে জেলাশাসক, পুলিস সুপার সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ২৫টি ফলের চারাগাছ রোপণ করেন। এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই সেগুলি উধাও হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পরপর গর্ত থাকলেও কোনও গাছ নেই। কে বা কারা গাছগুলি নিয়ে গেল, তা জানতে পুলিস, প্রশাসন ও বনদপ্তর চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে, চুরি করা গাছ যেন যত্ন করে লাগানো হয়, সে ব্যাপারেো বনদপ্তর বার্তা দিয়েছে। বাঁকুড়া দক্ষিণের ডিএফও প্রদীপ বাউরি বলেন, বনমহোৎসবের দিন এসপি, ডিএম, দপ্তরের আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিরা মোট ২৫টি ফলের চারাগাছ লাগিয়েছিলেন। সেগুলি কারা তুলে নিয়ে গিয়েছে, তা আমাদের জানা নেই। তবে, যে বা যারা চারগাছগুলি নিয়ে যাক, তারা যেন গাছগুলি যত্ন করে ফের রোপণ করে। এই বার্তা আমরা দিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, বনদপ্তরের তরফে লেবু, পেয়ারা সহ অন্যান্য ফলের চারাগাছ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে, লাগানো গাছ চুরি করার কোনও প্রয়োজন নেই। মাচানতলায় বনদপ্তরের অফিস থেকেই যে কেউ গাছের চারা সংগ্রহ করতে পারবেন।
বাঁকুড়ার এক পুলিস আধিকারিক বলেন, বিভিন্ন ধরনের চুরির ঘটনা শুনেছি। তবে, কোনও সরকারি অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে লাগানো সমস্ত গাছ তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। এবার দেখছি, মূল্যবান সম্পত্তি পাহারা দেওয়ার পাশাপাশি সদ্য লাগানো চারা গাছের উপরেও নজরদারি চালাতে হবে!
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ায় ফরেস্টের তিনটি ডিভিশন রয়েছে। মঙ্গলবার রবীন্দ্র ভবনে কেন্দ্রীয়ভাবে জেলার মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাঁকুড়া দক্ষিণ বনবিভাগ অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বে ছিল। এবারের বর্ষার মরশুমে বাঁকুড়ায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বনসৃজনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরে জেলাজুড়ে মোট ২০ লক্ষ বৃক্ষরোপণ করা হবে। এছাড়াও ব্যক্তিগত জায়গায় লাগানোর জন্য প্রায় পাঁচ লক্ষ চারা বিনামূল্যে বাসিন্দাদের মধ্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বনমহোৎসবকে স্মরণীয় করে রাখতে অনুষ্ঠানের মাঝে বৃক্ষরোপন করা হয়। বাঁকুড়ার জেলাশাসক সিয়াদ এন ও পুলিস সুপার বৈভব তেওয়ারি সহ অন্যান্যরা একটি করে ফলের চারা লাগিয়েছিলেন। তাঁদের নামাঙ্কিত বোর্ড গাছের পাশে বসিয়ে দেওয়া হয়। এদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে সেই বোর্ডও চোখে পড়েনি। গাছের সঙ্গে সেগুলিও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বনদপ্তরের এক আধিকারিক আক্ষেপ করে বলেন, বারুইপুর থেকে বিশেষ প্রজাতির পেয়ারার চারা আনানো হয়েছিল। অন্যান্য ফলের চারাও দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে নিয়ে আসা হয়। পুলিস, প্রশাসন ও আমাদের দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরা সেইসব চারা নিজ হাতে রোপণ করেছিলেন। জনপ্রতিনিধিরাও চারা লাগিয়েছিলেন। সেইসব চারা গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়টি অনভিপ্রেত। চারাগুলি চুরি না হলেই ভালো হতো। চারা তুলে পালিয়েছে চোর। নিজস্ব চিত্র