• লক্ষ্মীর ভাণ্ডার-বার্ধক্য ভাতার টাকা ‘অন্য অ্যাকাউন্টে’ সরানোর নেপথ্যে সক্রিয় চক্র, মমতার প্রকল্পের সুবিধা মানুষের কাছে পৌঁছতে বাধা সিস্টেমের ঘুণপোকাই!
    বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা প্রকল্পের সুবিধা মানুষের কাছে পৌঁছতে বাধা সিস্টেমের ঘুণপোকাই? কলকাতা পুরসভার ৫ নম্বর বরোর কর্মী উমেশ দাসকে গ্রেপ্তারের পর এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে পুলিস ও পুর প্রশাসনের হাতে। শুধু লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নয়, অ্যাকাউন্ট নম্বর খোদ ‘সার্ভারে’ বদলে দিয়ে বার্ধক্য ও বিধবা ভাতার টাকাও আত্মসাৎ করেছে পুর প্রশাসনের অন্দরে বসে থাকা কর্মী-অফিসারদের একাংশ। ইতিমধ্যেই বড়বাজার এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে এমন ৫৪টি ‘সন্দেহজনক’ অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করেছে পুর কর্তৃপক্ষ, যেখানে সরকারি প্রকল্পের টাকা জমা পড়ে। বেশিরভাগটা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার হলেও বেশ কিছু অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে বার্ধক্য ও বিধবা ভাতার টাকাও। তদন্তে পুলিস ও পুর প্রশাসন জানতে পেরেছে, বহু অ্যাকাউন্ট নম্বর মূল সার্ভারেই বদলে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে ফোন নম্বরও। যে তালিকা তদন্তকারী অফিসাররা হাতে পেয়েছেন, তাতে গ্রাহক বা বেনিফিশিয়ারির জায়গায় দাদা-দিদির মতো সম্বোধন, এমনকী বহু রাজনৈতিক নেতৃত্বের নামও লেখা আছে। শুধু তাই নয়, একটি মোবাইল নম্বরে একাধিক আধার নম্বর দেখিয়ে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যকাউন্ট খোলা হয়েছে। তাতেই সন্দেহ আরও তীব্র হয়েছে তদন্তকারীদের। অর্থাৎ, একটি বড় চক্র সক্রিয় রয়েছে আড়ালে। উপভোক্তাদের টাকা লোপাটের এমনই একটি চক্র বছর দুয়েক আগেও সক্রিয় হয়েছিল। সেবারও পুলিসের সাহায্য নিয়ে চক্র ভেঙেছিল নবান্ন। এবারও সেই প্রক্রিয়াই শুরু হয়েছে।

    সূত্রের খবর, তালিকা নিয়ে এর মধ্যে পুরসভায় শীর্ষ আধিকারিক পর্যায়ের একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের ওই শাখার অফিসারদের ডাকা হয়েছিল। ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের কয়েকটি তথ্য অবিলম্বে দিতে বলা হয়েছে—১) ওই শাখায় সরকারি প্রকল্পের কতগুলি গ্রাহক অ্যাকাউন্ট রয়েছে? ২) প্রত্যেকটি অ্যাকাউন্টের আধার ভেরিফিকেশন করা আছে কি? ৩) কতগুলি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভ রয়েছে? এই সংক্রান্ত একটি চিঠি ওই ব্যাঙ্কের পার্ক স্ট্রিটের প্রধান শাখাতেও পাঠানো হয়েছে। এক পুরকর্তা বলেন, ‘পুরো ঘটনাটাই বিস্ময়কর। আমাদের ধারণা, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কের ওই ব্রাঞ্চ আধার ভেরিফিকেশন না করেই বহু অ্যাকাউন্ট চালু করে দিয়েছে। আর কেওয়াইসি না থাকায় প্রকল্পের টাকা কার অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে, আদৌ সঠিক গ্রাহক পাচ্ছেন কি না, তাও ধরা সম্ভব নয়।’

    বৈঠকে ব্যাঙ্কের অফিসাররা জানিয়েছেন, ধৃত ওই ব্যক্তি একাই ১০টি ডেবিট কার্ড তুলেছেন। সেটা কীভাবে সম্ভব হল, তাও স্পষ্ট নয়। ধৃত উমেশকে জেরায় পুলিস কিন্তু জেনেছে, মুচিপাড়া, গিরিশ পার্ক সহ মধ্য কলকাতার একাধিক থানা এলাকায় শতাধিক গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে কারচুপি করেছে সে। অর্থাৎ, পুরকর্তার আশঙ্কা মোটেই অমূলক নয়। পুলিসের দাবি, একটি চক্র সিস্টেমের মধ্যে সক্রিয়। তাতে আরও পুরকর্মী জড়িত থাকতে পারে। এমনকী সোনাপট্টি ব্রাঞ্চ ছাড়াও ওই ব্যাঙ্কের অন্য শাখা ও সেখানকার কর্মীদের একাংশ চক্রে জড়িত রয়েছে বলে মনে করছে পুলিস।
  • Link to this news (বর্তমান)