একের পর এক নির্বাচনে ব্যর্থতায় ক্লান্ত মিঠুন, তাই কি এবার ‘শেষ লড়াই’য়ের ডাক?
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৯ জুলাই ২০২৫
দুর্গাপুরে মোদীর সভায় মিঠুন চক্রবর্তীর একটি মন্তব্যে রাজনৈতিক জল্পনা বেড়েছে। তাঁর মন্তব্য শুনে অনেকেই প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন, তাহলে কি বিজেপির ভরাডুবি অবস্থা দেখে এবার রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতে চাইছেন মিঠুন? নাহলে তিনি সভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় কেন বললেন, ‘এটাই শেষ লড়াই’?
প্রসঙ্গত, রাজ্য বিজেপিতে একে তো দক্ষ সংগঠকের অভাব, তার উপর রয়েছে গোষ্ঠীকোন্দল। দু’য়ের জেরে জেরবার বঙ্গ বিজেপি। ফলে বাংলায় গত নির্বাচনগুলিতেও ভালো ফল করতে পারেনি। তার উপর আগামী বছর আবার বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে দুর্গাপুরে মোদীর সভায় মিঠুন চক্রবর্তী বিধানসভা ভোটের পরেই রণে ভঙ্গ দেওয়ার কথা বলেছেন। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘এটাই শেষ লড়াই।’ বিষয়টির মধ্যে অনেকেই রাজনৈতিক তাৎপর্য খোঁজার চেষ্টা করেছেন। কারণ মিঠুনের এই ‘শেষ লড়াই’ মন্তব্যের মধ্যে তাঁর বয়স বা শারীরিক কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। বরং এর মধ্যে অনেকে রাজনৈতিক গন্ধ শুঁকছেন।
কারণ, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন থেকেই রাজ্যে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে কোমর বেঁধে নেমেছেন। এরপর ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির তারকা নেতা মিঠুন চক্রবর্তী দিনরাত এক করে প্রচার করেছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। ভালো ফল করা তো দূরের কথা লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ছয়টি জেতা আসনে পরাজয় হয়েছে গেরুয়া শিবিরের। এবারও সংগঠনের উল্লেখযোগ্য কোনও উন্নতি হয়নি। আবার গোষ্ঠী দ্বন্দ্বও রয়েছে সমানতালে। তাই বঙ্গ বিজেপির এই ‘অন্তঃসারশূন্য’ দশার কথা সম্ভবত আগেভাগে টের পেয়ে গিয়েছেন ‘মহাগুরু’। সেজন্যই এমন মন্তব্য করেছেন। ধারণা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের।
শুক্রবার দুর্গাপুরের নেহেরু স্টেডিয়ামে মিঠুন বলেছেন, ‘এবারের লড়াই শেষ লড়াই ভেবে মাঠে নামতে হবে। শেষ লড়াই জীবন, প্রাণ দিয়ে লড়তে হবে। আমাদের সঙ্গে মোদীর আশীর্বাদ রয়েছে। আমি থাকব, আপনারা থাকবেন – সকলে একসঙ্গে থাকব। কী নিয়ে কথা বলব? দুর্নীতি? দুর্নীতির একটা ফাঁকও নেই। মা-বোনেদের ইজ্জত নিয়ে কথা বলার উপায় নেই। বাংলার ছেলে আমি। বাংলার মা-বোন সকলে আমার। রাজনীতি করি না, মানুষনীতি করি। এবারে মাঠে নামছি তৈরি হয়ে।’
এক সময়ের বলিউড সুপারস্টার মিঠুন আরও বলেন, ‘২৩, ২৪ তারিখ থেকে পুরো মাঠে নামব। আপনাদের সাথে থাকব, কথা বলব। মাঠে থেকে লড়াই করব। এই লড়াই সবাই মনে রাখবে। বিজেপি হেরে যাওয়ার পাত্র নয়।’
এদিন তাঁর বক্তৃতার মাঝে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে রাজ্য পুলিশকেও বার্তা দিয়েছেন মিঠুন। তিনি বলেন, ‘পুলিশকে বলব নিরপেক্ষ হয়ে যান। তারপরে দেখুন বিজেপি কী করতে পারে।’ একথা শুনেই সভায় উপস্থিত বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হাততালি শুরু হয়ে যায়। এরপরই মিঠুন বলেন, ‘এই আওয়াজ আমার সাথে থাকা প্রয়োজন। এজন্য বলছি, ক্ষমতা আমাদেরও আছে। কিন্তু জোর করি না। কাউকে মারধরের কথা বলি না। কিন্তু ভাববেন না আমরা ভীতু। শুধু পুলিশকে বলুন নিরপেক্ষ হতে। ছাতি ফুলিয়ে বেরব। গুলি চালানোর হয় তো চালান। কিন্তু পিছন থেকে নয়। হিম্মত থাকলে সামনে থেকে লড়ুন।’