‘জয় শ্রীরাম’ ছেড়ে মোদির মুখে ‘জয় মা কালী, মা দুর্গা’, বাঙালি আবেগে সুড়সুড়ি, ১১ বছরে প্রধানমন্ত্রীকে বদলে দিয়েছে বাংলা, খোঁচা তৃণমূলের
বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুর ও কলকাতা: ‘জয় শ্রীরাম’— সভার শুরু থেকে শেষ, এটাই ছিল বিজেপি রাজনীতির ইউএসপি। কিন্তু বিগত ১১ বছরের সেই ট্র্যাডিশন ভাঙলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার দুর্গাপুরের সভায় একটিবারের জন্যও মোদির মুখে উচ্চারিত হল না রাম-নাম। বদলে তিনি বক্তব্য শুরু করলেন, ‘জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা’ ধ্বনি তুলে। আর যা নিয়ে তৃণমূলের খোঁচা, ১১ বছরের প্রধানমন্ত্রীকে বদলে দিয়েছে বাংলা। এখন তিনি আর পরিবর্তন করবেন কী করে! রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, গোবলয়ের পার্টি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বিজেপি গত কয়েকটি নির্বাচনে নিজেদের রীতি মেনে চলতে গিয়ে বাংলায় বারবার হোঁচট খেয়েছে। তাই এবার বাঙালি অস্মিতাকে ‘জাগিয়ে’ তুলতে জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা। বাঙালি আবেগকে সুড়সুড়ি দেওয়ার চেষ্টা চালানো হলেও, একের পর এক রাজ্যে বঙ্গভাষীদের হেনস্তা নিয়ে কিন্তু একটা কথাও বলেননি পদ্মপার্টির বড়, মেজ, সেজ ও ছোট নেতারা। তবে বাংলাপক্ষ এদিন সেই হেনস্তার প্রতিবাদে দুর্গাপুরে তুমুল বিক্ষোভও দেখিয়েছে।
শুক্রবার দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাকে ঘিরে প্রথম থেকেই অযোধ্যাবাসী ভগবান রামচন্দ্রকে ‘ব্রাত্য’ রেখেছিল বিজেপি। সভায় আসার জন্য দুর্গাপুরবাসীর বাড়ি বাড়ি যে আমন্ত্রণপত্র বিলি করা হয়েছিল পদ্মপার্টির তরফে, তাতে উল্লেখ ছিল ‘ভারতমাতার জয়, জয় মা দুর্গা, জয় মা কালী’। যা নিয়ে দুর্গাপুরবাসীর মধ্যে জোর চর্চা। শুধু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেই নয়, এদিন মঞ্চে নরেন্দ্র মোদিকে যে সব উপহার দেওয়া হয়েছে, সেখানেও দশভূজার উপস্থিতি। পোড়া মাটির দুর্গা মূর্তি, ব্রোঞ্জের দুর্গা প্রতিমা, আবার কেউ দিয়েছেন মা দুর্গার মুখ। ভগবান শ্রীরামচন্দ্রকে দলীয় স্লোগানে নিয়ে এসেও গত লোকসভা নির্বাচনে অযোধ্যা আসন খোয়াতে হয়েছে বিজেপিকে। এবার বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে ভোলবদলে পদ্মপার্টি দেবী দুর্গা ও কালীর শরণাপন্ন হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। যে প্রসঙ্গেই এদিন তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে নরেন্দ্র মোদি খোঁচা দেন তৃণমূল মহিলা
কংগ্রেসের রাজ্য সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁদের বক্তব্য, বাংলায় নরেন্দ্র মোদি আর পরিবর্তন আনবেন কী করে? আপনি নিজে এবং আপনার দলটাই বদলে গিয়েছে। যেকারণেই জয় শ্রীরাম ছেড়ে জয় মা কালী বলতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, বাংলার বিরুদ্ধে এদিন মোদি যে সমস্ত অভিযোগ তুলেছেন, তার তথ্য দিয়ে জবাব দিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি যেভাবে বঙ্গভাষী মানুষকে হেনস্থা করা হচ্ছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর মুখে বাংলা অস্মিতা মানায় না বলে খোঁচা তৃণমূল শিবিরের। সেই সূত্রেই কেন্দ্রের লাগু করা নির্দেশিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এদিন তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হয় সিঙাড়া ও জিলিপি খেয়ে এবং বিতরণ করে। পরে সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, সত্যের অপলাপ, মিথ্যাচার, তথ্যবিকৃতি, মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন নরেন্দ্র মোদি। নরেন্দ্র মোদির আজকের ভাষণে বিজেপি ৪০ আসনেও পৌঁছবে না। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন বাংলা এগিয়ে চলেছে। যা পরিস্থিতি, তাতে বিজেপি বাংলায় ৫০টি আসনও পাবে না। ২০১১, ২০১৬, ২০২১ সালে মমতাই থেকেছেন। আর ২০২৬ সালে মমতাই থাকবেন।