ভিড় জমলেও নেই চেনা মেজাজ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার চেনা মেজাজ দেখা গেল না দুর্গাপুরে। এমনকি, সভা শেষের আগেই বাড়ির পথ ধরলেন অনেকে।
আনন্দবাজার | ১৯ জুলাই ২০২৫
ভিড় হল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার চেনা মেজাজ দেখা গেল না দুর্গাপুরে। এমনকি, সভা শেষের আগেই বাড়ির পথধরলেন অনেকে।
গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টিতে দুর্গাপুরের নেহরু স্টেডিয়ামের মাঠের অবস্থা দাঁড়ায় কার্যত খাটালের মতো। বৃহস্পতিবার রাতভর চেষ্টা করে মাঠ কিছুটা সভার উপযুক্ত করা হয়। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে তুমুল বৃষ্টিতে মাঠ ফের কাদায় ভরে যায়। তার মধ্যেও ভিড় বাড়ছিল সভাস্থলে। বাঁকুড়া, বর্ধমান, আসানসোল থেকে বাসে করে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা এসে পৌঁছন। এক সময়ে মাঠের তাঁবুতে ঢাকা অংশ উপচে, স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরে ওঠে। দুপুর ২টো নাগাদ স্টেডিয়াম ভর্তি হয়ে যায়। সভাস্থলের আশপাশে ‘অপারেশন সিঁদুর’ লেখা টি-শার্ট কেনায় ছিল ভাল আগ্রহ।
কিন্তু তাল কাটে অতিরিক্ত দেরিতে। মোদী সভাস্থলে পৌঁছন বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ। তাতেই ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটে জনতার একাংশের। মোদী মঞ্চে ওঠার পরেই অনেকে স্টেডিয়াম ছাড়েন। মঞ্চ থেকে স্লোগান উঠলেও, মোদীর সভার চেনা গর্জন কার্যত ছিল না। বিকেল ৫টা নাগাদ যখন মোদীর বক্তৃতা পুরোদমে চলছে, তখন বাইরের রাস্তায় বাড়ি ফেরার জন্য অটো, টোটো, বাসের খোঁজে ব্যস্ত অনেকে। মোদী যখন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন, তখনও সভাস্থলে পুরনো উচ্ছ্বাস নজরে পড়েনি। সভাস্থল থেকে বেরিয়ে দুর্গাপুরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ নাগ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে এসেছিলাম। তিনি মঞ্চে উঠে গিয়েছেন। বক্তব্য পরে ফোনে শুনে নেব।’’
মোদী রোড-শো করতে পারেন, এমন সম্ভাবনার কথা বিজেপির তরফে জানানো হয়েছিল। সে জন্য দুর্গাপুরের গান্ধী মোড় থেকে সভাস্থল পর্যন্ত রাস্তার ধারে বাঁশের ব্যারিকেড করা হয়। প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে তার পাশে ভিড় করেছিলেন বহু লোকজন। দুপুরে বৃষ্টিতে ভিজেও অপেক্ষায় ছিলেন তাঁরা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কনভয় সে রাস্তায় থামেনি। মোদী গাড়ির ভিতর থেকেই হাত নাড়েন জনতার দিকে। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে খানিক হতাশ হয়েই বাড়ির পথ ধরেন মানুষজন।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য যদিও বলেন, “সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মানুষ মাঠে এসে গিয়েছেন। শুধু মোদীকে দেখার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের সংখ্যাই ৪০ হাজার পেরিয়ে গিয়েছিল।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘সভায় আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় বাধা দেওয়া হয়েছে। রাত হয়ে গেলে বাসে হামলা হতে পারত। তাই কিছু মানুষ আগে আগে বেরিয়ে গিয়েছেন। এটা যে কোনও বড় সভার চেনা ছবি।” পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, ‘‘নানা জেলা তো বটেই, পড়শি রাজ্য থেকেও লোক ভাড়া করে আনা হয়েছিল। তাঁরা স্টেডিয়াম দেখে চলে গিয়েছেন। কোথাও কাউকে বাধা দেওয়ার প্রশ্ন নেই।’’ জনসভায় বক্তব্য রাখার আগে, এ দিন মোদী সরকারি মঞ্চ থেকে প্রায় ৫,৪০০ কোটি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেন। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় গ্যাসের পাইপলাইনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, দুর্গাপুর-হলদিয়া প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের দুর্গাপুর থেকে কলকাতা অংশের উদ্বোধন, অন্ডালের ডিএসটিপিএস এবং রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উন্নত দূষণ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা, পুরুলিয়া-কোটশিলা রেলের ডবল লাইন, পশ্চিম বর্ধমানের দু’টি উড়ালপুলের উদ্বোধন হয় এ দিন।