• পরিযায়ীদের মেরে হাত ভেঙে দেওয়ার নালিশ
    আনন্দবাজার | ১৯ জুলাই ২০২৫
  • কাজ শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চেন্নাইয়ের তিরুভাল্লুর এলাকায় নিজেদের মেসে রাতের খাবারের ব্যবস্থা করছিলেন ১২ জন পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁদের এক জন মিলন শেখ জানাচ্ছেন, প্রায় ১০ জন স্থানীয় বাসিন্দা সে সময় হঠাৎ করেই চড়াও হয় তাঁদের উপরে। কিছু বোঝে ওঠার আগেই বেধড়ক মারধর করা হয় ওই ১২ জন পরিযায়ীকে। যাঁদের মধ্যে চার জনের বাড়ি মুর্শিদাবাদ থানার গুধিয়া এলাকায়। বাকি আট জনের বাড়ি এই জেলারই রানিতলা এলাকায়।

    স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। শুক্রবার লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গুধিয়ার এক জনকে। গুধিয়ার আর এক জনকে বহরমপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে। বাকিরা বাড়িতেই রয়েছেন বলে জানা যায়। আতঙ্ক যায়নি এখনও তাঁদের। চোখে ভয়। ভবিষ্যতে আর ভিন-রাজ্যে কাজে যাবেন কিনা তা নিয়েও অনিশ্চিত সুজন শেখ, মিলন শেখরা। ছেলেরা সুস্থ হোক, চাইছেন তাঁদের মা আলতা বিবি।

    কেন মারধর করা হয়েছিল তাঁদের? প্রশ্নের উত্তরে সুজন জানায়, তাঁরা বাঙালি। তাই তাঁদের মারা হয়েছিল। শুক্রবার মুর্শিদাবাদ থানায় অভিযোগ করেন সুজন। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানায়।

    রাজ্যসভার সাংসদ তথা রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। পরিযায়ী শ্রমিকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এর প্রতিবাদ করা উচিত।’’ পুলিশ সুপার কুমার সানি রাজ বলেন, ‘‘অভিযোগ হয়েছে। আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি।’’

    সুজন বলেন, ‘‘আমরা প্রায় ১৫ দিন আগে চেন্নাইয়ের তিরুভাল্লুর এলাকায় গিয়েছিলাম রাজমিস্ত্রির কাজে। একটা মেসে আমরা ১২ জন থাকতাম। চার জন গুধিয়ার বাকিরা রানিতলার। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন স্থানীয় বাসিন্দা এসে আমাদের পরিচয় জানতে চায়। আমরা বলি পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। এরপরেই শুরু হয় আমাদের মারধর। তারপরে ওরা চলে যায়। রানিতলার জখম এক জনকে নিয়ে আমার ভাই ইসমাইল শেখ ও আরও এক জন স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে যায়। তখন আবার মোটরবাইক করে স্থানীয়রা এসে আমাদের মারধর করে। আমাদের কাজের সরঞ্জাম দিয়ে ও ইট দিয়ে আমাদের মারে। আমার দাদা মিলন শেখের চোখে, পিঠে ওরা ভীষণ মারে। আমার হাত ভেঙে দেয়। আমরা ওই অবস্থাতেই ইসমাইলকে ফোন করে পুলিশ নিয়ে আসতে বলি। তখন স্থানীয়রা চলে যায়। পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যায়। রাতে অন্য এক জায়গায় থাকি। এরপর আমরা অনলাইনে টিকিট কেটে পরের দিন সন্ধ্যায় ট্রেনে উঠি। শুক্রবার সকালে বাড়ি ফিরি।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)