• বিপুল জনসমাগম শপিং মলে, জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থাই অমিল
    আনন্দবাজার | ১৯ জুলাই ২০২৫
  • কোথাও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে অসুস্থ ব্যক্তিকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে ছুটতে হয় হাসপাতালে। কোথাও অসুস্থ হলে খবর দিতে হয় পুলিশকে। কিন্তু ঘটনাস্থলেই অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই কোথাওই। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের যাতায়াত। তা সত্ত্বেও কলকাতা শহরের শপিং মলগুলিতে জরুরি পর্যায়ে কাউকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কোনও পরিকাঠামোই গড়ে ওঠেনি।

    সল্টলেকের নিক্কো পার্কে বুধবার ঘুরতে আসা তরুণের আচমকা মৃত্যুর কারণ হিসেবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট বলছে, হঠাৎ শরীরের রক্তচাপ কমে অসুস্থতা। রাহুল দাস নামে ওই তরুণের পরিবারের অভিযোগ, নিক্কো পার্কে তাঁকে অক্সিজেনটুকু দেওয়ার ব্যবস্থাও ছিল না। ছিলেন না কোনও চিকিৎসক। ওই ঘটনার পরে ভাঙড়ে অ্যাকোয়াটিকা ওয়াটার পার্কেও বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছে কলকাতা পুলিশ।

    অনেকেই মনে করছেন, ওই তরুণের এ ভাবে মৃত্যুর পরে নতুন করে সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। বিশেষত সেই সব জায়গা, যেখানে প্রতিদিন বহু মানুষের যাতায়াত, সেখানে বাধ্যতামূলক ভাবে জরুরি চিকিৎসার পরিকাঠামো থাকা উচিত। কলকাতার কয়েকটি শপিং মলে ঘুরেও যা দেখা গেল না।

    আপৎকালীন চিকিৎসার উদাহরণস্বরূপ চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বর্তমানে উচ্চ রক্তচাপ আর রক্তে শর্করার সমস্যা প্রায় ঘরে ঘরে। আচমকা রক্তচাপ কিংবা শর্করার মাত্রা কমে গেলে দ্রুত শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়তে পারে, এমনকি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুও হতে পারে। দু’টি সমস্যাই হতে পারে যে কোনও সময়ে।

    শহরের দু’-একটি শপিং মলে গিয়ে জানা গেল, সেখানে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বরফ, ব্যথার স্প্রে, হুইলচেয়ার আর স্ট্রেচার ছাড়া বিশেষ কিছুই থাকে না। দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলের নিরাপত্তা আধিকারিক বলেন, ‘‘কেউ অসুস্থ হলে অ্যাপ-ক্যাব বুক করে তাঁকে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিস্থিতি বেশি জটিল মনে হলে পাশেই আমাদের সংস্থার আবাসনের প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রেও নিয়ে যাওয়া হয়। মলে বিশ্রামের ঘর আছে।’’ ওই আবাসন কমপ্লেক্সের প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেখানে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থাই নেই!

    সল্টলেকের একটি শপিং মলের আধিকারিক জানান, জরুরি পরিস্থিতিতে কাউকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘এত বছর এ ভাবেই চলছে। কখনও তেমন মারাত্মক কিছু ঘটেনি। আমাদের কর্মীরা রক্তচাপ মাপতে পারেন। মলের এক দিকে একটি হাসপাতাল চেনের ক্লিনিক আছে। প্রয়োজনে তাদের সাহায্য নেওয়া হয়। তাদের অ্যাম্বুল্যান্স রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।’’

    অন্য দিকে, নিক্কো পার্কের ঘটনার পরে ভাঙড়ের অ্যাকোয়াটিকা ওয়াটার পার্কের নিরাপত্তা নিয়ে কড়াকড়ি শুরু করেছে প্রশাসন। কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে অ্যাকোয়াটিকার জেনারেল ম্যানেজারের কাছে একটি নির্দেশিকা পাঠিয়ে জানিয়েছে, পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পার্কের প্রতিটি পুলে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট, টিউব এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লাইফগার্ড রাখা বাধ্যতামূলক। প্রতিটি রাইড ও সুইমিং পুলের সামনে সঠিক সাইনেজ ও নির্দেশিকা স্পষ্ট বোঝার মতো বোর্ড ঝোলাতে হবে। জরুরি পরিষেবা, নিকটবর্তী হাসপাতাল, পুলিশ ও দমকলের হেল্পলাইন নম্বর স্পষ্ট ভাবে প্রদর্শিত হতে হবে পার্কের বিভিন্ন জায়গায়। রাখতে হবে অ্যাম্বুল্যান্স ও ফার্স্ট-এড ইউনিট। পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা রাখার পাশাপাশি রক্ষীর সংখ্যাও বাড়াতে বলা হয়েছে।

    পুলিশের নির্দেশ, যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে দুর্ঘটনা এড়াতে রাইডগুলি মাঝেমধ্যেই পরীক্ষা করতে হবে। নেশা করে কেউ পুল কিংবা রাইড ব্যবহার করছেন কিনা, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে সব নির্দেশ বাস্তবায়িত করতে হবে। এই বিষয়ে অ্যাকোয়াটিকার অপারেশনাল ম্যানেজার অত্রাজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের এখানে আগে থেকেই অ্যাম্বুল্যান্স, মেডিক্যাল ইউনিট, সিসি ক্যামেরা, লাইফগার্ড, ইনস্ট্রাক্টর রয়েছে। তবে পুলিশের নির্দেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। প্রয়োজনীয় আরও ব্যবস্থা আমরা নেব।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)