এক কিশোরীর জন্মের শংসাপত্রে বাবার পদবির বদলে মায়ের পদবি যুক্ত করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। শুক্রবার বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্ত নির্দেশ দিয়েছেন, কিশোরীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চন্দননগর পুরসভাকে বাবার পদবি ‘চট্টোপাধ্যায়’-এর পরিবর্তে মায়ের পদবি ‘ভট্টাচার্য’ যুক্ত করে আগামী এক মাসের মধ্যে পরিবর্তিত শংসাপত্র দিতে হবে। বিচারপতির আরও নির্দেশ, জন্মের শংসাপত্র ও অন্যান্য নথি থেকে বাবার নাম বাদ দেওয়া হলেও জন্মদাতা হিসাবে বাবার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না কিশোরীকে।
নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী জন্মের নথিতে মায়ের পদবি গ্রহণ করার আবেদন করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। তার আইনজীবী দাবি করেন, মা-বাবার মধ্যে আইনত বিচ্ছেদের আগে ও পরে মায়ের কাছেই লালিত-পালিত হচ্ছে কন্যা। জন্মের নথিতে বাবার পদবি থাকলেও পরবর্তী কালে আধার, পাসপোর্ট ও অন্যান্য নথিতে মায়ের পদবি ব্যবহার করছে কিশোরী। সম্প্রতি তার স্কুলের বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনের সময়ে পরিচয়পত্রের নথিতে ভিন্ন পদবি হওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়। আইনজীবীর অভিযোগ, সেই জটিলতা কাটাতে স্থানীয় পুরসভায় আবেদন করা হলেও তা খারিজ করে দেন পুর কর্তৃপক্ষ।
এ দিন পুরসভার আইনজীবী জানান, রাজ্যের জন্ম ও মৃত্যু রেজিস্ট্রেশন আইনের ১৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, জন্মের নথিতে ভুল না থাকলে তা পরিবর্তন করার ক্ষমতা পুরসভার নেই। তাঁর আরও দাবি, শুধু বৈবাহিক স্থিতির পরিবর্তনের ভিত্তিতে জন্মের নথিতে পরিবর্তন করতে পারে না পুরসভা। এর আগে এই মামলায় কিশোরীর বাবাকে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি কান্ত। আদালতের খবর, সেই সংক্রান্ত আইনি পদক্ষেপ করা হলেও বাবার বর্তমান ঠিকানা ও অবস্থান জানা যায়নি। এর পরে এই মামলা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি সংবাদমাধ্যমে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।
শুক্রবার কিশোরীর আইনজীবী জানান, আদালতের নির্দেশ মেনে একটি দৈনিক ইংরেজি ও একটি বাংলা সংবাদপত্রে এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। উভয় পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে কিশোরীকে পদবি পরিবর্তনের অনুমতি দেয় উচ্চ আদালত।
বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের পর্যবেক্ষণ, যে কোনও সন্তানের নাম, পদবি এবং পরিচয় তার বিকাশ ও ব্যক্তিস্বাধীনতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবেদনকারী কিশোরীর সমৃদ্ধি এবং কল্যাণের বিবেচনাই আদালতের কাছে প্রধানতম বিষয়। তাই তার আবেদন অনুযায়ী বাবার পদবির পরিবর্তে মায়ের পদবি গ্রহণ করার অনুমতি দেওয়া হল।