নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দীর্ঘদিন টানা দাঁড়িয়ে কাজ করলে কিংবা বসে থাকলে অথবা জিনগত সমস্যায় ফুলতে শুরু করে পায়ের শিরা। সঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণা। চিকিৎসা না করালে ওই শিরাগুলি ধীরে ধীরে কালচে হতে আরম্ভ করে। ব্যথা আরও বাড়ে। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এক সময় হাঁটাচলাই বন্ধ হয়ে যায় রোগীর। অনেকের তো পা ফেটে রক্ত বেরতে শুরু করে। শেষ পরিণতি পচন বা গ্যাংগ্রিন। এই রোগকে বলা হয় ভেরিকোজ ভেইন। এই রোগে ভুগছেন হাজার হাজার মানুষ। বিশেষত যাঁরা পেশার কারণে একটানা দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করেন কিংবা স্থূলকায়। দীর্ঘদিন ধরে পায়ের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভেরিকোজ ভেইনের চিকিৎসায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চালু হতে চলেছে ‘ভেরিকোজ ক্লিনিক’। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পা থেকে হৃদপিণ্ড পর্যন্ত একাধিক ধমনী ও শিরা রক্ত সরবরাহ করে। শিরাগুলির মধ্যে এক ধরনের ভালভ থাকে, যার মাধ্যমে হার্টে রক্ত যায়। রক্তের পরিবহণ হয় এখানে ঊর্ধ্বমুখী। ভালভগুলি খারাপ হয়ে গেলে রক্ত আর হার্টে পৌঁছতে পারে না। তখন নীচের দিকেই জমতে শুরু করে। তার জেরেই ফুলে যায় শিরা।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ট্রাফিক পুলিস সহ অসংখ্য পেশাজীবী ভেরিকোজ ভেইনের সমস্যায় ভোগেন। এই রোগের চিকিৎসায় আমরা একাধিক বিভাগের ডাক্তারদের নিয়ে একটি ক্লিনিক চালু করতে চলেছি। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেনারেল সার্জারি, কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি, ইন্টারভেনশনাল রেডিওলজি, অ্যানাসথেসিওলজি ইত্যাদি বিভাগের চিকিৎসকরা যৌথভাবে এই ক্লিনিক করবেন। এই প্রসিডিওরের জন্য ডিএসএ ক্যাথল্যাবের প্রয়োজন হয়। আপাতত স্থির হয়েছে, জেনারেল সার্জারি আউটডোরের একটি অংশে সপ্তাহে একদিন এই ক্লিনিক হবে। তবে কবে থেকে তা শুরু হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
বর্তমানে রাজ্যে শুধু পিজি হাসপাতালে সপ্তাহে একদিন ভেরিকোজ ভেইনের ক্লিনিক চলে। মেডিক্যাল কলেজ হতে চলেছে রাজ্যের দ্বিতীয় হাসপাতাল, যারা সরকারিভাবে এই ক্লিনিক চালু করছে। বিশিষ্ট সার্জেন এবং পিজি হাসপাতালের প্রফেসর ডাঃ দীপেন্দ্র সরকার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, অসংখ্য মানুষ ভেরিকোজ ভেইনের সমস্যায় ভুগছেন। পিজিতে বছরে কমপক্ষে এমন ১৫০-২০০ রোগীর অপারেশন হয়। অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজেও এই ক্লিনিক হলে ভালো।
এর চিকিৎসা কী? ডাক্তাররা বলছেন, প্রসিডিওর না করে বিশেষ ধরনের মোজা বা স্টকিংস পরে অনেক সময় কাজ হয়। তারপরও সমস্যা যদি বাড়ে তখন রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন, লেজার প্রভৃতি প্রসিডিওরে আক্রান্ত ছোট ছোট শিরাগুলি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও হার্টে রক্ত সরবরাহকারী প্রধান শিরার (ফিমোরাল) সঙ্গে অন্য শিরাকে বেঁধে দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ সময়, ছোট ছোট শিরাগুলি আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই হার্টের দিকে রক্ত সংবহনে সমস্যা হয় না। কারণ, পা থেকে প্রধান রক্তবাহী শিরা রক্ত পৌঁছে দিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। কিন্তু, কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত হয় সেই প্রধান রক্তবাহী শিরা। তখন পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয় ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস।