• ঝুঁকির বাজারে লগ্নির মাধ্যম ডাকঘরও! গ্রামীণ ভারতের সঞ্চয়ও যাক মিউচুয়াল ফান্ডে, চাইছে কেন্দ্র
    বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: শেয়ার বাজার, সোনার দাম, মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা, বাড়ি-গাড়ির দাম, মূল্যবৃদ্ধির হার—মোদি সরকারের ১১ বছরে সবই রকেটের গতিতে ঊর্ধ্বগামী। একমাত্র নিম্নগামী মানুষের আয় ও কর্মসংস্থান। তার সরাসরি প্রভাব পড়েছে মধ্যবিত্তের সঞ্চয় প্রবণতায়। আয় ও ব্যয়ের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছে আম জনতা। ব্যাঙ্কে সুদের হারও যথাযথ নয়। ফলে সঞ্চয় ক্রমেই কমছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কে ‘সুরক্ষিত’ ফিক্সড ডিপোজিট (এফডি) নয়, জনসাধারণের টাকা ঝুঁকির বাজারে এনে ফেলতে উদ্যোগী কেন্দ্রীয় সরকার। শহুরে মধ্যবিত্ত ইতিমধ্যেই শেয়ার বাজারে লগ্নির প্রবণতায় গা ভাসিয়েছে। এবার পালা গ্রামীণ ভারতের। আর সেজন্য বেসরকারি মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থাগুলির কাজ কাঁধে তুলে নিতেও কেন্দ্র দ্বিধা করছে না। দেশের গ্রামীণ এলাকার কোটি কোটি নাগরিকের সঞ্চয় শেয়ার বাজারে টেনে আনা নিশ্চিত করতে তাই এবার আসরে ডাকঘরও। বৃহস্পতিবার মুম্বইতে কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রকের অধীন ডাকবিভাগের সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব মিউচুয়াল ফান্ডের একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। স্থির হয়েছে, দেশে কমবেশি ২৪ কোটি মিউচুয়াল ফান্ড পোর্টফোলিওর কেওয়াইসি ভেরিফিকেশন, তথ্য সংগ্রহ ও আপডেট প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে ভারতীয় ডাকবিভাগ। বিশেষত গ্রামীণ ভারতের কথা মাথায় রেখেই এই উদ্যোগ।

    বিগত কয়েক বছরে ব্যাঙের ছাতার মতো বৃদ্ধি পেয়েছে অসংখ্য আর্থিক সংস্থার মিউচুয়াল ফান্ড ও এসআইপি (মাসিক কিস্তিতে বিনিয়োগ)। শেয়ার বাজারের বৃদ্ধিহার বিস্ময়কর। আর তা দেখে আলোর দিকে পতঙ্গের ছুটে আসার মতোই এই কয়েক বছরে মিউচুয়াল ফান্ড ও এসআইপিতে লগ্নি করেছে সাধারণ মানুষ। এই প্রবণতায় সবথেকে খুশি শেয়ার বাজার। কারণ, এক ধাক্কায় লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ঢুকছে বাজারে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে মিউচুয়াল ফান্ডে নতুন লগ্নিকারীর সংখ্যা হয়েছিল ৪০ লক্ষ। পরের অর্থবর্ষে যুক্ত হয় আরও ৬৯ লক্ষ। আর ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে ৯০ লক্ষাধিক। এই প্রবল বৃদ্ধিহার আর কোনও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। আর তাই মোদি সরকারও মিউচুয়াল ফান্ডে যাতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ টাকা লগ্নি করে, সেই মনোভাবই পোষণ করছে।

    কেন্দ্র জানিয়েছে, এর ফলে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলির পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকায় থাকা সাধারণ লগ্নিকারীদেরও সুবিধা হবে। কারণ, সকলের পক্ষে অনলাইন কেওয়াইসি আপডেট ও তথ্য আপলোড করা সম্ভব হয় না। কিন্তু ডাকবিভাগ হাতের কাছেই রয়েছে। এমনকী সর্বদা পোস্ট অফিসে হাজিরা দেওয়ার পর্যন্ত দরকার নেই। প্রয়োজন পড়লে ডোর টু ডোর ভেরিফিকেশন সার্ভিস দেবেন ডাককর্মীরা।

    ডাকবিভাগের প্রাথমিক যে দায়িত্ব ও কাজ, সেই পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যথাযথ পরিষেবা পাওয়া যায় না বহু ডাকঘরে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় জমা টাকা কিংবা স্বল্প সঞ্চয়ের টাকা পেতে দেরি হয়। এমনকী চিঠি, পার্সেল পরিষেবা নিয়েও দেশজুড়ে ক্ষোভ রয়েছে। তাহলে আবার মিউচুয়াল ফান্ডের নতুন দায়িত্ব কেন? এই লগ্নি সাধারণত শেয়ার বাজারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও সরকার কেন মধ্যবিত্তকে সেদিকে বেশি করে ঠেলে দিতে চাইছে? কেন্দ্রের অবশ্য সাফ জবাব, ভারতের আর্থিক লগ্নি কাঠামোকে আরও বিশ্বাসযোগ্য ও শক্তিশালী করতেই ডাকবিভাগকে যুক্ত করা হয়েছে এই প্রক্রিয়ায়। সেবির বিধি মেনে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করে এই পরিষেবা দেওয়া হবে। এর সুফল পাবেন সাধারণ গ্রাহকরা।
  • Link to this news (বর্তমান)