সন্দেশখালির হোটেল থেকে নকল ও আসল মিলিয়ে উদ্ধার ৩২ কোটি টাকা, শাহজাহানের পুরনো ডেরায় পুলিসের হানা
বর্তমান | ২০ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত ও কলকাতা: সন্দেশখালির এক সময়ের ‘বেতাজ বাদশা’ শেখ শাহজাহানের ‘ডেরা’ থেকে উদ্ধার হল বিপুল পরিমাণ টাকা! শনিবার সকালে সন্দেশখালি থানার পুলিস ধামাখালির একটি বিলাসবহুল হোটেলে অভিযান চালিয়ে ওই টাকা উদ্ধার করে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, উদ্ধার হওয়া টাকার একটা বড় অংশ জাল ৫০০ টাকার নোট। বাচ্চাদের খেলার জন্য যেসব নোট বিক্রি হয়, সেই নোটও মিলেছে গুচ্ছ গুচ্ছ। লক্ষাধিক আসল টাকাও পাওয়া গিয়েছে। সূত্রের খবর, প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকার জাল নোট বাজেয়াপ্ত হয়েছে। পুলিসের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, আসল-নকল এবং জাল নোট মিলিয়ে মোট ৩২ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে আসল টাকা ঠিক কত, শনিবার রাত পর্যন্ত তা জানা যায়নি। এই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। ধৃত দেবব্রত চক্রবর্তীর বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায়। আরেক ধৃত সিরাজউদ্দিন মোল্লা ওই জেলারই জীবনতলার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিস। তাদের এদিন বসিরহাট আদালতে তোলা হলে বিচারক ১২ দিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তকারীদের অনুমান, হোটেল থেকে জাল নোট অন্যত্র পাচারের ছক ছিল ধৃতদের। আর কোথাও জাল নোট মজুত আছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
খাতায়কলমে সন্দেশখালির ধামাখালির এই হোটেলের মালিক বাপ্পাদিত্য মণ্ডল। কিন্তু বকলমে এটি শাহজাহানের বলেই দাবি স্থানীয়দের একাংশের। বিরোধীদের অভিযোগ, এই হোটেলে একসময় ঘনিষ্ঠদের নিয়ে বৈঠক করতেন বর্তমানে জেলবন্দি শেখ শাহজাহান। এখান থেকেই অস্ত্র কারবার পরিচালিত হতো। সিবিআই এই হোটেল থেকেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করে বলে জানা গিয়েছে। পুলিস সূত্রে খবর, শুক্রবার দুপুরে সিরাজউদ্দিন ও দেবব্রত এই হোটেলের ২০৬ নম্বর রুম ভাড়া নেয়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শনিবার সকালে তাদের রুমে হানা দেয় পুলিস। তারপরই উদ্ধার হয় কাগজের কার্টুনে থরে থরে সাজিয়ে রাখা সব ৫০০ টাকার নোট। বিকেলে সিআইডির পাঁচ সদস্যের একটি টিম এসে পৌঁছয় সন্দেশখালি থানায়। সূত্রের খবর, টাকা উদ্ধারের ঘটনার তদন্তভার যেতে পারে সিআইডির হাতে। ধৃতরা কতদিন ধরে এসব কারবার চালাচ্ছে, আসল নোট ও জাল নোট মিশিয়ে রাখার কারণ কী, বাচ্চাদের খেলার নোটও কেন সেখানে রাখা হয়েছিল—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক তদন্তে তাঁরা জানতে পেরেছেন, দুই ধৃতের মধ্যে একজন টাকা নিতেই এসেছিল এখানে। তাদের কাছ থেকে একাধিক ভুয়ো প্রমাণপত্র ও আধুনিক মেশিন উদ্ধার হয়েছে। বসিরহাট পুলিস জেলার সুপার হোসেন মেহেদি রহমান বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে এখনই এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। ধৃতরা আগেই রেইকি করে গিয়েছিল। বাকিটা তদন্তের পর বলা যাবে।’ এই এলাকা থেকে জলপথে বাংলাদেশের সঙ্গে যাতায়াত করা যায় সহজে। তাহলে কি ধামাখালি এলাকাকে ‘সেফ করিডর’ করে বাংলাদেশে টাকা পাচারের ছক চলছে? উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা। নিজস্ব চিত্র