• আত্মহত্যা বাড়ছে ত্রিফলা চাপে? টাস্ক ফোর্স IIT কর্তৃপক্ষের
    এই সময় | ২০ জুলাই ২০২৫
  • এই সময়, কলকাতা ও খড়্গপুর: অ্যাসাইনমেন্ট, অ্যাটেন্ড্যান্স এবং ইন্টার্নশিপ। এই ত্রিফলা চাপের মুখে আইআইটি খড়্গপুরের বহু ছাত্রছাত্রীরই জীবন ওষ্ঠাগত। এই তিনটি দিক আবার পড়াশোনার জন্য প্রতিষ্ঠানের মান ধরে রাখতেও জরুরি।

    কিন্তু একের পর এক আত্মহত্যা, পড়ুয়াদের অনেকের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ৭৫ বছরের দোরগোরায় দাঁড়িয়ে থাকা এই প্রাচীন প্রযুক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে চিন্তায় রেখেছে।

    গত এক বছরেই নয় নয় করে পাঁচ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে গত শুক্রবার প্রাণ হারিয়েছেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ঋতম মণ্ডল।

    পড়ুয়াদের খোঁজ রাখতে এবং মন বুঝতে তাই প্রতিটি হস্টেলেই একটি করে স্টুডেন্টস টাস্কফোর্স তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইআইটি খড়্গপুর। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের গড়া একটি টাস্কফোর্স ইতিমধ্যেই অ্যাসাইনমেন্ট, অ্যাটেন্ড্যান্স এবং ইন্টার্নশিপের পলিসি রিভিউ করার জন্য কাজ শুরু করেছে।

    অধিকর্তা সুমন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘ছাত্রছাত্রীদের কথা সব থেকে ভালো ছাত্রছাত্রীরাই বুঝতে পারবেন। সেই কারণে হল বা হস্টেল স্পেসিফিক টাস্ক ফোর্স গঠনের কথা হয়েছে। আমরা আজকালের মধ্যেই এই টাস্কফোর্সগুলির কম্পোজ়িশন কী হবে জানাবো।’

    গত পাঁচ বছরে কেবল আইআইটি খড়্গপুরেই ১০ জন পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সব থেকে খারাপ সময় যাচ্ছে গত এক বছর। প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশের ধারণা, আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে।

    পড়ুয়াদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিয়ে কর্তৃপক্ষও বুঝতে পারছেন, অ্যাসাইনমেন্ট বা প্রজেক্টের কঠিন চাপ অনেককেই সমস্যার মধ্যে ফেলছে। পাশাপাশি দেশের এক নম্বর ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার চাপ রয়েছে। তার উপরে অ্যাটেন্ড্যান্স।

    এই কারণে গত কয়েক বছরে যথাযথ উপস্থিতির হার না থাকার কারণে ডি–রেজিস্টার্ড স্টুডেন্টের সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে কয়েক মাস আগে মৌখিক ভাবে অধ্যাপকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যেন পড়ুয়াদের তাঁরা ডি–রেজিস্টার্ড না করেন।

    তবে পড়ুয়াদের কাছে আরও সংবেদনশীল হতে এ বার কর্তৃপক্ষ হস্টেল-স্তরেই স্টুডেন্টস টাস্ক ফোর্স গঠন করতে চলেছে। যাতে তাঁরা হস্টেলে নিজেদের সহপাঠীদের আচরণের উপরে নজর রাখতে পারেন।

    প্রয়োজনে সাহায্য করতে এবং কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে যথা সময়ে তথ্য দিতে পারেন। মৃত ছাত্রের পরিবারের সঙ্গেও শুক্রবার রাতে দেখা করে কথা বলেন অধিকর্তা-সহ বাকিরা। মেকানিক্যালের ওই মৃত ছাত্রের বাড়ি দক্ষিণ কলকাতার পূর্ব পুটিয়ারিতে।

    শনিবার ময়নাতদন্তের পরে ওই ছাত্রের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। খড়্গপুরেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন পরিবারের লোকজন। কেন ওই ছাত্র এত বড় পদক্ষেপ করলেন, সেটা এখনও ধোঁয়াশায় ঘেরা।

    আইআইটি সূত্রের খবর, পড়াশোনায় মেধাবী বলে পরিচিত ওই পড়ুয়া রেজাল্ট খুবই ভালো করতেন। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর রেজাল্ট খারাপ হতে শুরু করে। তাই নিয়েই কি মনে মনে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি? অধ্যাপকদের অনেকেই মনে করছেন এ ভাবে রেজাল্ট খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক নয়। পুলিশ অবশ্য সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখছে।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অদ্ভুত ভাবে সিলিং ফ্যানে ঝুলেছিলেন ঋতম। মুখে ঢাকা দিয়েছিলেন বালিশের কভার। তারপর গামছা গলায় পেঁচিয়ে ফাঁস লাগানো হয়।

    চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মৃতদেহ দেখে মনে হয়েছে বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। শুক্রবার সকালে বাড়ির কারও ফোন না ধরায় ১১টা নাগাদ এক সুইপারকে প্রথম ফোন করেন ঋতমের বাবা।

    ছেলে কী করছে তা জানতে চান। তারপরই আইআইটি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যান।

    এদিকে, দেশ জুড়ে ছাত্রদের উপরে র‍্যাগিং, পড়ুয়াদের আত্মহত্যার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট আগেই একটি ন্যাশনাল টাস্কফোর্স তৈরি করেছে। সেই টাস্কফোর্সকে গত ১৪ জুলাই সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, প্রায় প্রতিটি রাজ্যের ডেটা নিয়ে কাজ করতে।

    সব ডেটার থেকে প্রাপ্ত তথ্যের একটি রিপোর্ট জমা করতে। রাজ্যগুলিকে একজন নোডাল অফিসার নিয়োগ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। যাঁরা টাস্কফোর্সকে তথ্য দেবে।

  • Link to this news (এই সময়)