• পশ্চিম মেদিনীপুরে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২০ জুলাই ২০২৫
  • চলতি বছরের বন্যায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এখনও অবধি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জুলাই মাসের ৮ তারিখ থেকে হওয়া বন্যায় ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোণা ১, চন্দ্রকোণা ২, ঘাটাল ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত, দাসপুর ১ ব্লকের ২টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ঘাটাল পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ড, ক্ষীরপাই পৌরসভার কিছুটা অংশ, খড়ার পৌরসভার ৩ টি ওয়ার্ড জল প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় ১৮ টি গ্রাম পঞ্চায়েত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৩২৭ টি গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। তিনটি পৌরসভার মোট ১৭টি ওয়ার্ড জলমগ্ন। জলবন্দী রয়েছেন ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৬৫৩ জন মানুষ। ৩৩৪ হেক্টর জমির পাট, ৯০ হেক্টর জমির সবজি, ৫৭ হেক্টর জমির আমন ধানের বীজ নষ্ট হয়েছে। নতুন করে বীজতলা করে কীভাবে এই মরসুমে ধান রোপণ করবে সেটা এলাকার চাষীদের কাছে চিন্তার বিষয়।

    ঘাটাল ব্লকের সাত বছরের শিশু সুলতানা খাতুন, ঘাটাল ব্লকের নিমাই ডোগরা এবং দাসপুর ১ নং ব্লকের ঝড়ু জানা– বন্যায় এই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ১৩৮ বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩৯২টি বাড়ি। ৩৩টি ত্রাণ শিবির চালু করা হয়েছে। সেই ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন ১১৬৩ জন। ৩৩টি কমিউনিটি কিচেনের কাজ চলছে। বন্যার্ত ২৬৫৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। সরকারিভাবে ২২টি নৌকা মানুষের জন্য দেওয়া হয়েছে।

    এছাড়া পিডব্লুডি ঘাটাল পুরসভাতে ৪টি নৌকা দিয়েছে ১ নাম্বার চাতালে। সিভিল ডিফেন্স, এসডিআরএফ এবং এনডিআরএফ মিলিয়ে মোট আটটি উদ্ধারকারী বোট কাজে নেমেছে। ৫৬টি মেডিকেল টিম প্রতিদিন প্লাবিত এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দিচ্ছে। আশা কর্মীরা ডিঙিতে করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছেন।

    বন্যা প্লাবিত এলাকায় ১১৪টি প্রাণী সম্পদ শিবির খোলা হয়েছে। প্রতিদিনিই বিভিন্ন প্লাবিত এলাকায় এই ধরনের শিবির চালু রয়েছে। সেই সব শিবিরে ৫৫৩টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলিতে ত্রিশ হাজার পাঁচশোটি ত্রিপল, ২৫ হাজার ২৫০টি জামাকাপড় বিলি করা হয়েছে। ৫৮ মেট্রিক টন চাল, ২৫ মেট্রিক টন পশু খাদ্য, ৫২০ টি ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কিট বিলি করা হয়েছে। ২৩৮ডি ট্যাঙ্কে করে বিভিন্ন প্লাবিত এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ করা হয়েছে।

    এছাড়াও ২ লক্ষ ৫০ হাজার জলের পাউচ বিলি করা হয়েছে। নিমতলাতে একটি মোবাইল ট্রিটমেন্ট ইউনিট বসিয়ে পাউচ তৈরির কাজ চলছে। ৫৭৫টি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। সাপে কেটে দেওয়ায় ১১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ২৪৫ জন গর্ভবতী মহিলাকে প্লাবিত এলাকা থেকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই সন্তান প্রসব করেছেন। অনেকে মাদার্স হাটে ভর্তি আছেন।

    কয়েক হাজার লিটার চোলাই মদ ও মদের উপকরণ নষ্ট করা হয়েছে। আবগারী দপ্তরের উদ্যোগে দিনরাত লাগাতার অভিযান চলছে। বর্তমানে শিলাবতী, কেঠিয়া, রূপনারায়ণ, ওল্ড কংসাবতীতে জলস্তর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম চালু আছে।

    এই পরিস্থিতির মধ্যেও ডিভিসির জল ছাড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভূঁইয়া। তিনি জানিয়েছেন, এই বিপর্যয়ের মধ্যেও মাইথন ও পাঞ্চেত বাঁধ থেকে সম্মিলিতভাবে ৬৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে দুর্গাপুর বাঁধ থেকেও ৬৫ হাজার ৪০০ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। ফলে পশ্চিম মেদিনীপুরের মানুষকে আরও দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হবে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)