সে দিনের সচিত্র পরিচয়পত্রের আন্দোলনের সঙ্গে এখনকার ভোট- ব্যবস্থাকে একবন্ধনীতে রেখে ধর্মতলায় একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ বাঁধছে তৃণমূল কংগ্রেস। ভাষা ঘিরে উদ্ভুত সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর জেরে বাঙালির আত্মাভিমানকেই পুঁজি করেই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নামতে চাইছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বার্তা দিয়েই শনিবার সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘আত্মপরিচয় ও ভাষার গণতান্ত্রিক অধিকারের লড়াইয়ে প্রতিটি নাগরিকের পাশে আছি।’
সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দাবিতে ১৯৯৩ সালের একুশে জুলাইয়ের আন্দোলন ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে মমতার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন যুব কংগ্রেসের ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ বছর তেত্রিশ তম ‘শহিদ তর্পণে’র মঞ্চ থেকে সেই ভোটাধিকার ও নাগরিকত্বের রাজনীতিকেই সামনে আনতে চাইছে তৃণমূল। গত কয়েকদিন ধরে রাজনীতির অভিমুখ যে দিকে রয়েছে তাতে স্পষ্ট, এ বারের এই সভা থেকেই বিজেপি- বিরোধী লড়াইয়ে সেই পথে এগোতে চাইছেন মমতা। তার মধ্যে একাধিক রাজ্যে বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করার ঘটনাগুলিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা।
আগামী বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের সব থেকে বড় কর্মসূচি কার্যত এটাই। ফলে এ বারের এই আয়োজন থেকে দলের একেবারে নীচেরতলা পর্যন্ত দলের রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছনোই রাজ্যের শাসকদলের মূল লক্ষ্য। একই সঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে সাংগঠনিক প্রস্তুতির মধ্যেই বিহারের এই প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মতো প্রশ্ন তুলেছেন মমতাও। সেই সূত্রে তালিকা সংশোধনের কাজে দল যে কর্মসূচি নিয়েছে, সে সম্পর্কেও করণীয় নির্দিষ্ট করার কথা ভাবা হয়েছে।
হাই কোর্টের একাধিক বিধিনিষেধের মধ্যেই একুশে জুলাইয়ের আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছে তৃণমূল। ধর্মতলায় মঞ্চ সহ সভাস্থল তৈরির কাজ প্রায় শেষ। সেই সঙ্গে কলকাতা ও লাগোয়া অঞ্চলের সব প্রধান রাস্তা কর্মসূচি সম্পর্কিত ‘গেট’, ব্যানার ও পোস্টারে সাজানো হয়েছে। শনিবারও দলের রাজ্য নেতারা সভাস্থলে এসে প্রস্তুতি তদারকি করেছেন। ১৩ ফুট উঁচু ও ৪২ ফুট চওড়া মঞ্চে দলের সাংসদ, বিধায়ক, অতিথিরা ছাড়াও প্রতিবছরের মতো শহিদ পরিবারের লোকেদের জন্য আলাদা ভাবে বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এ দিকে এই কর্মসূচির আয়োজন নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন বিরোধী শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুলিশকে দিয়ে বাস ভাড়া করাচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ২০০ বাস ভাড়া করে দিয়েছেন। আমি শুধু মনে করিয়ে দেব, জনগণের করের টাকায় পুলিশের বেতন হয়।’’