অনুমতি ছাড়া নবান্ন অভিযান হলে কোথায় থাকে আপত্তি? ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ পরিদর্শনে গিয়েই সুর চড়ালেন মমতা
আনন্দবাজার | ২০ জুলাই ২০২৫
ধর্মতলায় ‘রাস্তা আটকে’ ২১ জুলাইয়ের সভা নিয়ে কড়া পর্যবেক্ষণ রেখেছে কলকাতা হাই কোর্ট। তা নিয়ে বিতর্কের আবহে রবিবার, অর্থাৎ ২১ জুলাইয়ের আগের দিন সভামঞ্চ পরিদর্শনে গিয়ে সুর চড়ালেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, ‘‘পুলিশের অনুমতি ছাড়া নবান্ন অভিযান হলে আপত্তি কোথায় থাকে?’’
রাত পোহালেই সোমবার তৃণমূলের ‘শহিদ দিবস’। তার আগে রবিবার দস্তুর মেনে ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের সভাস্থল পরিদর্শনে যান তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানে সব ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখার পর দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বার্তা দিতে গিয়ে ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের সেই ঘটনার কথা মনে করালেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘ওরা (সিপিএম) কাউকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দিত না। আমাদের দাবি ছিল, সচিত্র পরিচয়পত্র। সেই সময় আমাদের বিরাট আন্দোলন হয়েছিল।আমাদের আন্দোলন দমানোর ক্ষমতা ছিল না সিপিএমের। গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করতে গিয়ে ওরা এমন ভাবে গুলি চালিয়েছিল যে, ১৩ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। দেড়শো জন পুলিশের গুলিতে আহত হন। প্রায় ৩৩ বছর ধরে এই প্রোগ্রাম এখানে হয়, তার কারণ এখানে অনেকগুলো প্রাণ লুটিয়ে পড়েছিল। তাই আমাদের বছরে একটাই প্রোগ্রাম শহিদ স্মরণে আমরা এখানেই করি।’’
তৃণমূলনেত্রীর সংযোজন, ‘‘এ নিয়েও অনেকের আপত্তি আছে। আমার বক্তব্য, তারা যখন নবান্ন অভিযান করেন পুলিশের অনুমতি ছাড়া, তখন আপত্তি কোথায় থাকে? আমাদের দেখে ওদেরও প্রোগ্রাম করতে হয়। কই আমরা তো ওদের দেখে প্রোগ্রাম করি না! তৃণমূলের থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।’’
ধর্মতলার তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচির জেরে যানজট এবং নাগরিক যন্ত্রণা নিয়ে মামলা করেছে বাম আইনজীবী সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া লয়ার্স ইউনিয়ন’ (এআইএলইউ)। সংগঠনের আইনজীবী শামিম আহমেদ, সৌম্য দাশগুপ্ত, সিদ্ধার্থশঙ্কর মণ্ডল, তাপস মাইতি, রাজিতলাল মৈত্র কোর্টে জানিয়েছেন, ওই কর্মসূচির দিন ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। হাই কোর্টের আইনজীবী সংগঠনও কাজকর্ম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, যানজটের জন্য লোকজন কর্মস্থলে পৌঁছোতে পারবে না বলে দাবি। মামলাকারীদের আর্জি ছিল, অফিসযাত্রী এবং অন্যান্য মানুষের যাতে কাজের জায়গায় পৌঁছোতে সমস্যা না-হয় তার জন্য বেলা ১১টা পর্যন্ত মিছিল বন্ধ করা হোক।
শুক্রবার ওই মামলায় শুনানির পর শহরে যানজট এড়াতে তৃণমূলের ‘শহিদ দিবসের’ কর্মসূচিতে মিছিলের সময় বেঁধে দিয়েছে হাই কোর্ট। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশ, আগামী সোমবার, ওই অনুষ্ঠানের দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের এলাকায় মিছিল ঢুকতে পারবে। তার পর সেই ভিড়কে থিতু হওয়ার জন্য এক ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে। সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ধর্মতলার সভাস্থলের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকায় কোনও মিছিল করা যাবে না। যানজট যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে কলকাতা পুলিশকে।
পাশাপাশি ২১ জুলাইয়ের সভা নিয়ে শাসক তৃণমূলের আইনজীবীদের উদ্দেশে বিচারপতি ঘোষ বলেছেন, ‘‘আগামী বছর থেকে শহিদ মিনার, ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড বা অন্য কোথাও সভা করা যায় কি না, সেটা আপনাদের ভাবতে হবে।’’ যদিও এটি আদালতের পর্যবেক্ষণ। নির্দেশনামায় তার কোনও উল্লেখ নেই। এই বিষয়টি নিয়ে এ বার মুখ খুললেন মমতা।
দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে মমতা বলেন, “ঝড়-জল হলেও আসবেন। শান্তিপূর্ণ ভাবে আসুন। একুশে জুলাইয়ের কর্মসূচি চিরকাল চলবে। সাধারণ মানুষের হয়তো একটু অসুবিধা হবে কাল। ইতিমধ্যে লক্ষাধিক মানুষ চলে এসেছেন। আগামিকালও জেলা থেকে মানুষ আসবেন।”