রাতে ডানলপে হানা পুলিশের, গ্রেফতার পাঁচ কুখ্যাত দুষ্কৃতী
আনন্দবাজার | ২০ জুলাই ২০২৫
ডানলপ মোড়ে এসে দাঁড়াল একটি দামি গাড়ি। তাতে উঠল দু’জন। এর পরে ব্যারাকপুরের দিকে মোড় নিতেই সেই গাড়িটি ঘিরে ধরলেন এক দল লোক। গাড়ি থেকে নামিয়ে আনা হল পাঁচ জনকে। মুহূর্তের মধ্যে সেখানে এসে দাঁড়ানো পুলিশের গাড়িগুলিতে তোলা হল তাদের। শুক্রবার রাতে বি টি রোডের ব্যস্ত ডানলপ মোড়ে এমন দৃশ্যে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন পথচারীরা।
পরে জানা গেল, ওই পাঁচ জনই কুখ্যাত দুষ্কৃতী। আর যাঁরা তাদের গাড়ি ঘিরে ধরেছিলেন, তাঁরা ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের তিনটি থানার পুলিশকর্মী। ধৃতদের জেরা করে পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দা কাউকে খুনের সুপারি নিয়েই এলাকায় ঢুকছিল ওই দুষ্কৃতীরা। কিন্তু কে তাদের ‘টার্গেট’ ছিল, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট করেনি পুলিশ। তবে পুলিশের মতে, সাধারণ কাউকে খুনের ছক কষলে সাধারণত এত জন দুষ্কৃতী একসঙ্গে ‘অপারেশন’-এ নামত না। তা হলে কি ওই দুষ্কৃতীদের নিশানায় ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কোনও প্রভাবশালী ছিলেন?
ব্যারাকপুরের নগরপাল মুরলীধর শর্মা বলেন, ‘‘খুনের উদ্দেশ্যেই ওই দুষ্কৃতীরা এলাকায় ঢুকছিল বলে প্রাথমিক জেরায় স্বীকার করেছে। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত জানার চেষ্টা হচ্ছে।’’ পুলিশ জানাচ্ছে, ধৃতদের নাম আহমেদ আলি ওরফে চুনুয়া, শেখ সাদ্দাম হুসেন, মহম্মদ মনসুর, মহম্মদ আলি ওরফে মুন্না, মহম্মদ আফাতাসাম ওরফে খুররাম। টিটাগড় পুরসভার শাসকদলের এক পুরপ্রতিনিধির দাদা খুররাম। ধৃতদের কাছ থেকে একটি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু শুধু একটি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পাঁচ দুষ্কৃতী কেন আসবে? তা হলে কি স্থানীয় কোনও অস্তানা থেকে আরও অস্ত্র নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল? এই দিকটিও তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন বলে খবর।
সূত্রের খবর, টিটাগড়ের কুখ্যাত দুষ্কৃতী মহম্মদ জাফর হুসেন ওরফে শাহজাদার ডান হাত বলে পরিচিত চুনুয়া। তবে, দীর্ঘদিন ধরেই টিটাগড় ছেড়ে অন্যত্র থাকছিল বছর বিয়াল্লিশের ওই দুষ্কৃতী। জানা যাচ্ছে, ব্যারাকপুরের ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছিল শাহজাদা ও চুনুয়ার। আর, ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিল বিহারের কুখ্যাত দুষ্কৃতী সুবোধ সিংহ। দীর্ঘদিন ব্যারাকপুরে বন্দি থাকার পরে সুবোধ এখন ভিন্ রাজ্যের জেলে রয়েছে। প্রশ্ন হল, তা হলে কি ভিন্ রাজ্যে বসে আবারও ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে কোনও কাজের সুপারি নিয়েছিল সুবোধ? না কি তার ঘনিষ্ঠেরা নিজেরাই এ বার ‘অপারেশন’-এ নেমেছিল?
মাসকয়েক আগে মাদক পাচারের মামলায় শাহজাদাকে গ্রেফতার করেছিল ব্যারাকপুর পুলিশ। সেই সময়ে চুনুয়া শাহজাদার গাড়িতে থাকলেও তাকে চিনতে পারেননি তদন্তকারীরা। সেই সুযোগে পালিয়ে গিয়েছিল চুনুয়া। পরবর্তী সময়ে পরিচয় জানতে পেরে তার উপরে নজর রাখতে শুরু করে পুলিশ। সেই সূত্রেই পুলিশ জানতে পারে, হাওড়া থেকে একটি গাড়িতে ব্যারাকপুরের দিকে আসছে ওই দুষ্কৃতী। অন্য দিকে, মণীশ শুক্লকে খুনের ঘটনায় জেল খাটা আসামি খুররামও ডানলপে এসে চুনুয়াদের সঙ্গে যোগ দেবে বলে জানতে পারে পুলিশ। সেই মতো তিনটি থানার বাছাই করা অফিসারেরা সাদা পোশাকে পৌঁছে যান ডানলপে।
পুলিশ সূত্রের খবর, হাওড়া থেকে সাদ্দাম, মনসুরকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিল চুনুয়া। ডানলপ থেকে তাদের গাড়িতে ওঠে খুররাম ও মুন্না। পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, প্রাথমিক জেরায় জানা গিয়েছে, গাড়িতে বসেই ‘অপারেশন’-এর পুরো ছক সাজানোর পরিকল্পনা হয়েছিল। ধৃত পাঁচ জনকেই পাকড়াও করে টিটাগড় থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার আদালত ধৃতদের সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।