• দু’টি গ্রাম প্লাবিত, ১৭টি নদীবাঁধ ও পাড় ক্ষতিগ্রস্ত, ফুঁসছে তিস্তা-জলঢাকা
    বর্তমান | ২১ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি ও সংবাদদাতা, ফালাকাটা: একরাতে ভারী ও অতিভারী বৃষ্টিতে উত্তরবঙ্গের দুই ডজন এলাকা বিপর্যস্ত। ইতিমধ্যে ফালকাটায় সঞ্জয় ও মালবাজারে সুখানি নদীর জলে প্লাবিত দু’টি গ্রাম। জলমগ্ন ১২৫টি বাড়ি। শুধু তাই নয়, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৭টি নদীবাঁধ। নদীগুলিও ফুলেফেঁপে উঠেছে। ইতিমধ্যে জলঢাকা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় লাল ও তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সঙ্কেত জারি করেছে সেচদপ্তর। এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস অব্যাহত। সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত নদী তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা।

    রাজ্যের মিনি সচিবালয় উত্তরকন্যার বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতির কাজে হাত দিয়েছে সেচদপ্তর। পাশাপাশি পরিস্থিতির মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে কুইক রেসপন্স টিম।

    টানা দাবদাহের পর শনিবার রাতে উত্তরবঙ্গে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের ২৪টি জায়গায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। যারমধ্যে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে ১৪টি জায়গায়। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ময়নাগুড়িতে বৃষ্টির পরিমাণ ১৭২ মিলিমিটার। এর বাইরে আলিপুরদুয়ারে ১১৯.৪০, হাসিমারায় ১২০.৪০, মাথাভাঙায় ১৩৩, জলপাইগুড়িতে ১৩১.৮০ ও মালবাজারে ১৪২.২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সমতলের পাশাপাশি দার্জিলিং, কালিম্পং ও সিকিম পাহাড়েও ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। যার জেরে সুখানী নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার সুলকাপাড়া গ্রাম। এখানে ২৫টি বাড়ি জলমগ্ন। আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের পলাশবাড়ি প্লাবিত হয় সঞ্জয় নদীর জলে। ফালাকাটা-সলসলাবাড়ি ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরে সেতু নির্মাণের জন্য মাটির বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ ঘুরিয়েছিল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। এদিন সেই বাঁধ ভেঙে ১০০টি বাড়িতে জল ঢুকে যায়। কয়েকশ বিঘা জমির ধান জলে ডুবে গিয়েছে। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সড়কে ডাইভারশন ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়। বালি, পাথর ফেলে সেটি রক্ষা করে সড়ক কর্তৃপক্ষ। এরজেরে সংশ্লিষ্ট সড়কে কিছুক্ষণ যান চলাচল বন্ধ ছিল। বিকেলে বাড়ি থেকে জল নামলেও গ্রামের রাস্তা ও জমি ছিল জলের তলায়। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সাইট ইঞ্জিনিয়ার নকুল রাভা বলেন, হিউম পাইপ বসিয়ে জল নামানোর চেষ্টা চলছে।

    শুধু তাই নয়, বেশকিছু জায়গায় নদীর বাঁধ ও পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ির মাল শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ছোবল বসিয়েছে মাল নদী। এখানে বিসর্জনঘাট, সেনা ছাউনি বিপন্ন। সেনা ছাউনির সীমানার ১০০মিটার ভেঙেছে। বৃষ্টিতে হলদিবাড়িতে মেখলিগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের বক্সিগঞ্জে তিস্তা নদীর বাঁধের ৬০ মিটার ও জলপাইগুড়িতে নন্দপুরে ৩০ মিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বাইরে আলিপুরদুয়ার জেলায় কুরমাই, তোর্সা, ঢোকসা প্রভৃতি নদীর ১৩টি জায়গায় নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। কিছু জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

    এদিকে পাহাড়ে বৃষ্টির জেরে তিস্তা ও জলঢাকা নদী ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। সেচদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ির দোমহনি থেকে মেখলিগঞ্জ এবং মেখলিগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় জারি করা হয়েছে হলুদ সঙ্কেত। আর মাথাভাঙায় জলঢাকা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় জারি করা হয়েছে লাল সঙ্কেত।
  • Link to this news (বর্তমান)