জাপানি এনসেফেলাইটিসের থাবা, পরিস্থিতি দেখলেন রাজ্য স্বাস্থ্যকর্তা
বর্তমান | ২১ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: জেলায় জাপানি এনসেফেলাইটিস (জেই) থাবা বসানোয় পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়ল রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর। রবিবার জলপাইগুড়িতে জেই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসেন এক স্বাস্থ্যকর্তা। জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের টিমকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বিভিন্ন এলাকায় যান। জাপানি এনসেফেলাইটিসের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। আক্রান্তদের বাড়ির লোকজনের কাছ থেকেও বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান। এলাকায় কোথাও শূকরের খামার থাকলে, দ্রুত বন্ধের নির্দেশ দেন। জলপাইগুড়ি জেলায় চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত পাঁচজন জাপানি এনসেফেলাইটিসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর। এরমধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। জলপাইগুড়ি পুরসভা ও সদর ব্লক মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত জেই’তে আক্রান্ত তিনজন। এরমধ্যে পুরসভা লাগোয়া পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের জমিদারপাড়া এলাকায় সম্প্রতি ৫৩ বছরের এক প্রৌঢ়ার মৃত্যু হয়েছে। এদিন ওই এলাকায় যান স্বাস্থ্যকর্তা। একইসঙ্গে তিনি সদর ব্লকের বাহাদুর পঞ্চায়েতের সুবোধনগরেও যান। ওই এলাকার এক চা শ্রমিক জাপানি এনসেফেলাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ১১ দিন ধরে জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের অধীন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরিদর্শনে আসা রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তা অবশ্য এদিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জেলায় জাপানি এনসেফেলাইটিস পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘সব ঠিক আছে।’
যদিও বাহাদুর পঞ্চায়েতের প্রধান অমিত দাস বলেন, ‘আমার পঞ্চায়েত এলাকায় জেই’তে আক্রান্ত হয়ে একজন হাসপাতালে ভর্তি। তবে আগের থেকে তিনি এখন অনেকটা ভালো আছেন। জাপানি এনসেফেলাইটিস যাতে না ছড়াতে পারে, সেজন্য আমরা এলাকায় যে ক’টি শুয়োরের খামার ছিল, সব বন্ধ করতে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘এদিন রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের এক কর্তা এসেছিলেন। তিনি এলাকা ঘুরে দেখেন। আক্রান্তের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেন। স্বাস্থ্যদপ্তর ও প্রশাসন সজাগ আছে।’
বাহাদুর সুবোধনগর এলাকায় জাপানি এনসেফেলাইটিসে আক্রান্ত হয়ে যে প্রৌঢ় হাসপাতালে ভর্তি, এদিন তাঁর ছেলে স্বাস্থ্যদপ্তরের টিমকে জানান, ‘বাবার জ্বর ছিল। সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা। উঠে দাঁড়াতে পারত না। প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখাই। তারপর মেডিক্যালে ভর্তি করি।’ পাহাড়পুরের জমিদারপাড়া এলাকায় জেই উপসর্গ নিয়ে যে মহিলার মৃত্যু হয়েছে, তাঁর দেওর বলেন, ‘বউদিরও জ্বর ছিল। উঠে দাঁড়ানোর মতো ক্ষমতা ছিল না। ১৪ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর মারা যায়।’ জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, জাপানি এনসেফেলাইটিসের উপসর্গ নিয়ে মৃতরা জলপাইগুড়ি সদর ব্লক, ডাবগ্রাম ও বানারহাটের বাসিন্দা ছিলেন। এদিকে, জাপানি এনসেফেলাইটিস রুখতে প্রশাসনের নির্দেশ পাওয়ার পরই জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের গড়ালবাড়ি শোবারহাট এলাকায় শুয়োরের খামার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খামারের মালিক গণেশ বাসফোর বলেন, ‘আমার ১৫-২০টি শুয়োর ছিল খামারে। প্রশাসনের নির্দেশ পেয়েই সব শুয়োর বিক্রি করে দিয়েছি।’ সদরের বিডিও মিহির কর্মকারের দাবি, ‘আমাদের টিম অভিযান চালাচ্ছে। কোথাও শুয়োরের খাটাল চলছে বলে অভিযোগ মিললেই সেটি বন্ধে পদক্ষেপ করছি আমরা।’