ভরা বর্ষাতেও মাইথনে জলস্তর অনেক নীচে, জল ছাড়া অব্যাহত
বর্তমান | ২১ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: স্বামীর সঙ্গে টইটুম্বর মাইথন দেখতে এসেছিলেন আসানসোলের বধূ পায়েল সরকার। ইচ্ছে ছিল উত্তাল মাইথনের জলরাশি নৌকায় পেরিয়ে সবুজ দ্বীপে সেলফি তুলবেন। কিন্তু, মাইথনের বাথানবাড়ির রূপ দেখে তিনি হতাশ। কোথায় উত্তাল মাইথন! গরমকালের মতো ডাঙায় নৌকা বাঁধা রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন শুনছি মাইথন, পাঞ্চেত থেকে অনেক জল ছাড়ছে। ভেবেছিলাম, বর্ষায় নিশ্চয়ই জলাধারে প্রচুর জল হয়েছে। তাই দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু, এখানে তো তেমন জলই নেই। পায়েলের মতো অনেকেই মাইথনের এমন রূপ দেখে হতবাক। এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও রাজ্যের আর্জিতে কান না দিয়ে কেন জলাধার থেকে প্রচুর জল ছাড়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে পর্যটকদের অনেকের মনেই।
একমাস ধরে ক্রমাগত জল ছাড়ায় বর্ষায় মাইথনের জলরাশির যে ভয়ঙ্কর রূপ থাকে, তা এবার উধাও হয়ে গিয়েছে। ওই জলাধার লাগোয়া সিধাবাড়ি, বাথানবাড়ির মতো এলাকা দেখে বোঝার উপায় নেই, এবার বর্ষায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাঁধের জলস্তর অনেকটাই নীচে।
বাঁধের এপারে যখন এমন দৃশ্য, তখন বাঁধের জল ছাড়ার বিভিন্ন গেটের কাছে উল্টো ছবি দেখা গেল। সেখানে দু’টি গেট খুলে দেওয়ায় প্রবল জলরাশি নদীতে পড়ছে। প্রতি মুহূর্তে হাজার হাজার কিউসেক জল বাংলায় বয়ে চলেছে। মাইথন ও পাঞ্চেতের জলের চাপে খানাকুল সহ নিম্ন দামোদরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষ জলবন্দি হচ্ছেন। এই বিষয়টি নিয়ে মাইথনে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও প্রশ্ন তুলেছেন। তাহলে কি রাজ্য সরকারের অভিযোগই সত্য? বাংলাকে বিপাকে ফেলতেই এই কৌশল? এমনই প্রশ্ন উঠছে তাঁদের মনে। এদিনও মাইথন থেকে ২৮হাজার ও পাঞ্চেত থেকে ৩৭হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়। অর্থাৎ শুক্র, শনিবারের পর রবিবারও একই হারে জল ছাড়া চলছে। অথচ দু’টি বাঁধেই এখন অনেক কম জল ঢুকছে। তাই জলাধারের জলস্তর তাড়াতাড়ি নেমে যাচ্ছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও রাজ্য সরকারের জল না ছাড়ার আর্জি কানে তোলা হচ্ছে না।
কেন এমন অবস্থা? উত্তর দিয়েছেন দামোদর ভ্যালি রিজার্ভার রেগুলেটরি কমিটির মেম্বার সেক্রেটারি সঞ্জীব কুমার। তিনি বলেন, ২৪জুলাই থেকে প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তেনুঘাটের জলস্তর অনেক উঁচুতে রয়েছে। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ জল ছাড়বে। সেই সময় পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়-সেই জন্যই আগাম প্রস্তুত থাকা হচ্ছে।