নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: এ যেন অনেকটা ‘কুমির ছানা’র গল্প! একই স্কুলে কমিউনিটি টয়লেট বানানোর টেন্ডার হল পর পর দু২ বছর। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পুরনো কমিউনিটি টয়লেটেই নতুন ফলক লাগিয়ে নতুন কাজ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। এমনই অভিযোগে বিদ্ধ সরকারি প্রকল্পের এক ঠিকাদার। ঘটনাটি ঘটেছে হাঁসখালি ব্লকের শান্তিনগর জয়নারায়ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে দাবি প্রশাসনের।
সূত্রের খবর, গত আর্থিক বছরে জেলা পরিষদ একটি কমিউনিটি শৌচালয় তৈরির অর্থ বরাদ্দ করে ওই স্কুলে। প্রায় ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় হাঁসখালি পঞ্চায়েত সমিতি। নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডার হয়। ওয়ার্ক অর্ডার করে টয়লেট তৈরির কাজ শেষও করে ফেলে ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, চলতি অর্থ বছরে ওই স্কুলে ফের একটি কমিউনিটি টয়লেট তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয় নদীয়া জেলা পরিষদের তরফে। সেই মতো টেন্ডার করা হয় ৩ লক্ষ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকার। সরকারি কাজের ঠিকাদার দীনেশ বৈরাগী সেই টেন্ডার পান। কিন্তু, যেখানে ইতিমধ্যেই টয়লেট তৈরি হয়ে রয়েছে সেখানে আবার নির্মাণ কেন করা হবে? অভিযোগ, পঞ্চায়েত সমিতির ফলক তুলে নতুন কাজের অর্থাৎ জেলা পরিষদের টেন্ডারের বিবরণ লেখা ফলক লাগিয়ে টয়লেটটি নতুন বলে চালিয়ে দেন ওই ঠিকাদার। এমনকী স্কুলের প্রধান শিক্ষককে না জানিয়ে নতুন প্রকল্প শেষ করার কাগজে সইও করিয়ে নেওয়া হয়। পরে বিষয়টি নজরে আসতে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। এহেন কাণ্ড যে ঘটেছে, তা স্বীকার করে নেন হাঁসখালি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থেকে স্থানীয় জেলা পরিষদের সদস্য। সভাপতি শিল্পী দাশগুপ্ত বলেন, ‘গত বছর আমরা জেলা পরিষদ থেকে টাকা পেয়েছিলাম। তাতে নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডার করে আমরা সেই কমিউনিটি টয়লেট তৈরি করে ফেলেছিলাম। শুনলাম এবারে নাকি ফের টেন্ডার হয়েছিল। আর ঠিকাদার আমাদের ফলক খুলে জেলা পরিষদের কাজের ফলক লাগিয়ে নতুন কাজ বলে চালানোর চেষ্টা করেছে।’ আবার স্থানীয় জেলা পরিষদের সদস্যা রত্না ঢালী বলেন, ‘ঠিকাদার এই কাজ করেছে, তা আমরা জানতাম না। আসলে দু’জয়গা থেকেই একই স্কুলে টয়লেট তৈরির টেন্ডার হয়ে গিয়েছিল কোনওভাবে। সমস্ত কিছু ঘটে যাওয়ার পরে আমি জানতে পারি।’
অভিযুক্ত ঠিকাদার দিনেশ বৈরাগী বলেন, ‘আমার কর্মীরা ভুল করে করে এই কাজ করে ফেলেছে। আমি জানতাম না ওখানে পুরনো টয়লেট রয়েছে। কারণ আমার নিজের সেখানে যাওয়া হয়নি আগে। আমার এক কর্মী আমাকে রাস্তা থেকে ওই টয়লেট দেখিয়ে বলেছিল, নতুন তৈরি হয়ে গিয়েছে। তবে আমি জেলা পরিষদের সঙ্গে কথা বলেছি। নতুন একটি টয়লেট বানিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে আমাকে।’ এদিকে, বিষয়টি জানাজানি হবার পর অবশ্য নড়ে চড়ে বসে জেলা পরিষদ। তদন্ত শুরু করেছে তারা। বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অনুপকুমার দত্ত বলেন, ‘ইতিমধ্যেই আমরা জেলাস্তর থেকে তদন্ত শুরু করেছি। সেই রিপোর্ট এলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। সেই অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’ বিতর্কিত শৌচালয়। নিজস্ব চিত্র