মুগবেড়িয়ায় মদ খেয়ে হাসপাতালে তাণ্ডব গুণধর শিক্ষককে থানা থেকে ফেরাতে নারাজ পরিবার
বর্তমান | ২১ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: স্কুলের মধ্যে মদ্যপান করার অভিযোগে গত ৭ জানুয়ারি তাঁকে সাসপেন্ড করেছিলেন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক। সাসপেনশনে থাকা ভূপতিনগর থানার হাটুরিয়া প্রাইমারি স্কুলের সেই টিচার ইন-চার্জ শনিবার মাঝ রাতে মুগবেড়িয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ঢুকে ব্যাপক তাণ্ডব চালান। চিকিৎসকের অভিযোগ পেয়ে তাঁকে পাকড়াও করে মেডিক্যাল টেস্ট করায়। রিপোর্টে ওই শিক্ষক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে ওঠে আসে। তাঁকে থানায় আনা হয়। রবিবার সকালে থানা থেকে অভিযুক্ত প্রাইমারি শিক্ষকের বাড়িতে ফোন করা হয়। কিন্তু তাঁর মা কিংবা স্ত্রী কেউই তাঁকে নিতে যেতে রাজি হননি। তাঁদের বক্তব্য, বাড়িতে গিয়ে ফের হাঙ্গামা বাধাবেন ওই শিক্ষক। রবিবার দিনভর তাঁকে নিয়ে নাজেহাল হতে হল পুলিসকে।
ভূপতিনগর থানার অর্জুননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের হাটুরিয়া প্রাইমারি স্কুলের টিচার ইন-চার্জ রাজশেখর মাইতি। বাড়ি ইটাবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কোটমুখা গ্রামে। স্ত্রীও একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। বোন পেশায় নার্স। মা আইসিডিএস কর্মী। ২০১২ সালে চাকরি পাওয়া ওই শিক্ষক প্রায়শই নেশায় বুঁদ হয়ে থাকেন। এর আগে স্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে থানায় শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। স্কুলের মধ্যেই মদ খেয়ে মাতলামি করার অভিযোগে গত ৭ জানুয়ারি মুগবেড়িয়া-১চক্রের এসআই নিমাই বৈদ্য তাঁকে সাসপেন্ড করেন। এই মুহূর্তে স্কুলে মোট ৫৭ জন ছাত্রছাত্রী। তাঁকে সাসপেন্ড করার পর সহশিক্ষক সুব্রতকুমার মাইতিকে টিচার ইন-চার্জ করা হয়। এছাড়া একজন পার্শ্বশিক্ষিকা রয়েছেন। অন্য একজন শিক্ষককে লোকাল অ্যারেঞ্জমেন্ট সিস্টেমে ওই স্কুলে আনা হয়েছে।
শনিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ মুগবেড়িয়া গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে থানায় ফোন আসে। তাতে বলা হয়, একজন যুবক মদ্যপ অবস্থায় ঘোরাঘুরি করছেন। কারও কথা কানে তুলছেন না। তাঁকে চলে যেতে বলায় চিৎকার চেঁচামেচি করছেন। ওই মেসেজ পাওয়ার পরই কতর্ব্যরত অফিসার আমিনুল ইসলাম হাসপাতালে গিয়ে ওই টিচার ইন-চার্জকে থানায় ধরে আনেন। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ২৯২ ধারায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই ধৃতের বাড়িতে খবর পাঠানো হলে তাঁর মা জানান, ছেলে মাঝেমধ্যেই মারধর করে। স্ত্রী কিছুদিন আগে তাঁর নামে থানায় এফআইআর করেছে।
হাটুরিয়া প্রাইমারি স্কুলের বর্তমান টিচার ইন-চার্জ সুব্রতবাবু বলেন, গত ৭ জানুয়ারি ওই শিক্ষককে সাসপেন্ড করা হয়। তাঁকে জয়েন করার জন্য এসআই অফিস থেকে চিঠি পাঠানো হলেও তিনি যোগ দিচ্ছেন না। এদিকে, অভিভাবকরাও তাঁকে বদলির দাবিতে অনড়। এই অবস্থায় অন্য স্কুল থেকে একজন শিক্ষককে আমাদের স্কুলে লোকাল অ্যারেঞ্জমেন্টে আনা হয়েছে। অভিযুক্ত রাজশেখর মাইতি বলেন, রাতে হাসপাতালে গিয়ে হল্লা করা ঠিক হয়নি। আমি ভুল করেছি। গত জানুয়ারি থেকে সাসপেনশনে রয়েছি। ভবিষ্যতে এধরনের ভুল করব না। ভূপতিনগর থানার ওসি শেখ মহম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ওই শিক্ষক মদ্যপ অবস্থায় হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করছিলেন। আমরা খবর পেয়ে তাকে ধরে থানায় আনি। অভিযুক্ত শিক্ষক।-নিজস্ব চিত্র