সংবাদদাতা, রামপুরহাট: দুর্গাপুরে এসে অনুপ্রবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত বললেও ভারতের নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশ ব্যাক নিয়ে একটিও শব্দ খরচ করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হলেন রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম। গত ২৬ জুন বীরভূমের পাইকরের দুই পরিবারের ছয় সদস্যকে দিল্লি পুলিস বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করে বলে অভিযোগ। তাঁরা হলেন, দানিশ শেখ ও তাঁর গর্ভবতী স্ত্রী সোনালি বিবি এবং তাঁদের পাঁচ বছরের ছেলে সাবির শেখ। এছাড়া রয়েছেন সুইটি বিবি ও তাঁর দুই সন্তান— বছর পনেরোর কুরবান শেখ ও পাঁচ বছরের ইমাম শেখ। যা নিয়ে দুই পরিবারের অন্য সদস্যরা উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। হাইকোর্টে দিল্লি পুলিসের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন তাঁরা। এদিন বাংলাদেশ থেকে পাঠানো ওই ছ’ জনের ভিডিও বার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে সামিরুল প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লিখেছেন, সুইটিরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মুরারই বিধানসভা এলাকায় বসবাস করছেন। কিন্তু না, তিনি তাঁর পৈতৃক বাড়ি থেকে কথা বলছেন না। তিনি এখন বাংলাদেশে আছেন, যেখানে তাঁকে এবং আরও পাঁচজনকে, যার মধ্যে তিনজন নাবালকও রয়েছে, দিল্লি পুলিস বাংলাদেশে নির্বাসিত করেছে। তাঁদের একমাত্র অপরাধ ছিল বিজেপি শাসিত দিল্লিতে বাংলা ভাষায় কথা বলা। যেখানে তাঁরা বছরের পর বছর ধরে জীবিকার প্রয়োজনে বসবাস করছিল। সুইটি এখন বাংলাদেশে অসহায়ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমন একটি দেশে বাঙালি হওয়ার জন্য শাস্তি পাচ্ছেন যেখানে তাঁর সরকার তাঁকে রক্ষা করতে অস্বীকার করছে। প্রধানমন্ত্রীজি আপনি সুইটি বা সোনালি সম্পর্কে একটি শব্দও বলেননি। তাঁরা ভারতীয়, এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের অধিকার রক্ষা করা আপনার কর্তব্য। আপনি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন যে কোনও উপায়ে, তা করুন। আমরা প্রকৃত অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার বিরুদ্ধে নই। আমাদের প্রতিবাদ, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষী ভারতীয় নাগরিকদের হয়রানি এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কয়েকটি প্রশ্নও ছুড়ে দিয়েছেন— যদি অনুপ্রবেশ ঘটছে, তাহলে বিএসএফের কাছে কেন জবাবদিহি চাওয়া হচ্ছে না? কেন আপনি ভারতীয় নাগরিকদের, বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে হুমকির মুখে থাকা ব্যক্তিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেননি? বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রায় ১.৫ কোটি পরিযায়ী শ্রমিক বছরের পর বছর ধরে জীবিকা নির্বাহের জন্য বাংলায় অবস্থান করছেন। আপনি এমন একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতে পারবেন না, যেখানে অন্য কোনও রাজ্যের কেউ হয়রানির শিকার হয়েছেন। কারণ বাংলা সর্বদা সকলের আবাসস্থল। আপনি বলেছেন, ‘কেন বাংলার লোকেরা বাইরে কাজ করতে যাবে?’ আপনার মনে রাখা উচিত যে, সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার থেকে। সামিরুল এও লিখেছেন, সুইটিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে লড়াই জারি থাকবে।