একুশে নম্বরটি বা শব্দটির সঙ্গে বাঙালির এক অমোঘ সৌভ্রাতৃত্ব ও আকর্ষণ। সুকুমার রায়ের একুশে আইন, একুশে ফেব্রুয়ারি (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস) এবং জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানে একুশে জুলাই। কোনোটাই বাঙালি জাতি কখনও ভুলতে পারবে না। এর মধ্যে প্রথমটি ছাড়া বাকি দুটি বাংলার বঞ্চনার ইতিহাস থেকে সৃষ্ট।
১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার অধিকারের জন্য ছয়জনের শহীদের রক্ত দিয়ে লেখা এবং একুশে জুলাই ১৯৯৩ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ভোটার কার্ড ব্যবহার করা আবশ্যক করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন সিপিএম সরকারের বিরুদ্ধে রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানে তেরো জন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথীর রক্তে ভেজা শহরের আখ্যান। সেইদিনের ঘটনার কথা এখনও বাঙালির বুকে বাজে। পুলিশের নৃশংসতা ও বর্বরতা এমনভাবে কখনো দেখিনি। প্রায় সব পত্রিকায় প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছিল সেই বর্বরতার ছবি। শিউরে উঠেছিলাম।
ভোটার কার্ড, যা মানুষের দাবী ভোটে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য, সেই দাবিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় জঘন্য নৃশংসতা ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছিল সেদিন। এইদিনকে সাক্ষী হিসেবে রেখে তার পরের বছর ১৯৯৪ সালের একুশে জুলাই ধর্মতলার মোড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশাল জনসভার আয়োজন করে আসছেন। বিরোধী দল পাল্টেছে কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একই আছেন। ক্রমশঃ আড়ে বহরে মঞ্চের আকার বেড়েছে, প্রশাসনিক তৎপরতা বেড়েছে কিন্তু, মানুষ ঐদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে এবং শুনতে দলে দলে রাজ্যের সমস্ত প্রান্ত থেকে আসে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং একুশে জুলাই হল মানুষের আবেগ। সেই আবেগ বহু অশীতিপর বৃদ্ধ বৃদ্ধার কাছেও। তাদের দেখেছি এক অমোঘ আকর্ষণে ঐদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে। কাজেই একথা বললে অত্যুক্তি হয় না অমর একুশে ফেব্রুয়ারির মতোই অমর একুশে জুলাই।