• প্রস্তুত ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ, উঠে আসবে বাঙালির আত্মমর্যাদা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২১ জুলাই ২০২৫
  • আজ তৃণমূল কংগ্রেসের ‘শহিদ তর্পণ’। চলতি বছরের একুশে জুলাই কেবল তৃণমূলের কাছে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের দিন নয়, পাশাপাশি ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শেষ মেগা ইভেন্টও বটে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিও সম্পন্ন, এবার কেবল জমায়েতের পালা। বেলা গড়ালেই নির্ধারিত সময়ে মঞ্চে উঠবেন তৃণমূল-সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। এবার একটু মঞ্চসজ্জার দিকে আলোকপাত করা যাক। ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তৈরি সুবিশাল মঞ্চে বসতে পারবেন একসঙ্গে প্রায় ৬০০ জন। কেমন হচ্ছে সেই মঞ্চসজ্জা? রবিবার দুপুরেই তা প্রকাশ্যে এল। একুশে জুলাই সমাবেশের মূল মঞ্চটি হচ্ছে ত্রিস্তরীয় এবং আড়ে-বহরে অনেকটা বড়। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তিন ধাপে তৈরি মঞ্চে বসবেন শীর্ষ নেতৃত্ব, অতিথি, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, শহিদ পরিবারের সদস্যরা। প্রথম মঞ্চটি মাটি থেকে ১১ ফুট উঁচু, দ্বিতীয় ও তৃতীয়টির উচ্চতা যথাক্রমে ১২ ও ১৩ ফুট। মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট এবং প্রস্থ ৪২ ফুট। গোটা মঞ্চ ঘিরে ফেলা হবে দলীয় পতাকা তেরঙ্গার রঙে। তিনটি মঞ্চের সবচেয়ে উঁচুটিতে থাকবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের প্রথম সারির নেতারা। দ্বিতীয় মঞ্চে থাকবেন শহিদ পরিবারের সদস্যরা এবং মঞ্চের তৃতীয়ভাগে থাকবেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। অন্যদিকে, শহরজুড়ে থাকছে একাধিক জায়েন্ট স্ক্রিন। পার্ক স্ট্রিট, এসপ্ল্যানেড চত্বরে ১৫টি জায়েন্ট স্ক্রিন বসানো হবে। তাতে পথচলতি মানুষজনও সমাবেশের সাক্ষী থাকতে পারবেন। সমাবেশ শান্তিপূর্ণ করতে ১০০০ স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। মঞ্চের চারপাশ ঘেরা হয়েছে গার্ডরেল দিয়ে, লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।

    সোমবার কলকাতায় বিক্ষিপ্ত ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও মঞ্চ ঘেরা হচ্ছে না, খোলাই থাকছে। বিগত বছরগুলিতে এই দিনে বৃষ্টিতে ভিজেই বক্তব্য রাখতে দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁদের কথায়, বৃষ্টি আশীর্বাদের মতো নেমে আসে এই দিনটিতে। এবারও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে হাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছে। গোটা সমাবেশ দলের সমাজমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। শনিবার এবং রবিবার বাংলার প্রতিটি জেলা থেকেই বিপুল সংখ্যক দলীয় কর্মী-সমর্থকগণ মহানগরীতে এসে পৌঁছেছেন। সেই মতো দলের উচ্চনেতৃত্ব কর্মী- সমর্থকদের জন্য থাকা-খাওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও করেছেন। গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, শিয়ালদহ, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্ক-সহ একাধিক স্থানে কর্মী-সমর্থকদের জন্য বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়টির তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন কলকাতা কর্পোরেশনের বোরো চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ। রবিবার দুপুরে কলকাতা স্টেশন, হাওড়া স্টেশন, উত্তীর্ণ এবং ক্ষুদিরামে সশরীরে উপস্থিত হয়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খাবার বিতরণ করেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। ধর্মতলা-সহ মহানগরী জুড়ে সাজো সাজো রব। চিকিৎসার ব্যবস্থার পাশাপাশি, শিশুদের জন্য দুধ, মহিলাদের জন্য পৃথক থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে অস্থায়ী শিবিরগুলিতে। কর্মী-সমর্থকদের খাবারের মেনুতে রয়েছে ভাত, ডিম, ডাল, আলু-সোয়াবিনের তরকারি।

    সব প্রস্তুতি আগেভাগে সেরে রাখা হলেও চিন্তা বাড়াচ্ছে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা এবং যানজট। যদিও শহরের যানজট রুখতে তৎপর কলকাতা পুলিশ, ইতিমধ্যেই জারি করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তি। মাঠে নেমেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাও। আজ সকালে ধর্মতলার উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাবে মূলত সাতটি বড় মিছিল। শ্যামবাজার মোড়, হেদুয়া পার্ক, হাজরা পার্ক থেকে মিছিল যাবে ধর্মতলায়। অন্যদিকে, পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট থেকে মিছিল যাবে ধর্মতলায়। এছাড়াও হাওড়া, শিয়ালদহ, কলকাতা স্টেশন থেকে তিনটি বড় মিছিল ধর্মতলা যাবে। একাধিক মিছিলের নেতৃত্বে থাকবেন শশী পাঁজা, মালা রায়, অতীন ঘোষদের মত শীর্ষ নেতৃত্বরা। কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে চালু করা হয়েছে একাধিক হেল্পলাইন নম্বর। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনেই সোমবার ভোর ৪টে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থাকবে বিধিনিষেধ বেশ কিছু রাস্তায়। আর্মহার্স্ট স্ট্রিট, বিধান সরণি, কলেজ স্ট্রিট, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তালিকায় আছে ব্র্যাবোর্ন রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, নিউ সিআটি রোড, রবীন্দ্র সরণিও। সোমবার শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশন হয়ে দলের অগণিত কর্মী-সমর্থক আসবেন। তাঁদের সভাস্থলে যেতে যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে কারণে বাস ও ছোট গাড়ির ব্যবস্থা করেছে দল। একুশের রঙ লেগেছে রেড রোড চত্বরেও। গার্ডরেল দিয়ে রাস্তা ভাগ করা হয়েছে, রেলিং সাজানো হয়েছে তৃণমূলের পতাকায়। বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এবারের একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে দলনেত্রী মমতা এবং অভিষেক কী বার্তা দেন তা শোনার জন্যই অধীর আগ্রহে রয়েছেন তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। সেই সঙ্গে গোটা বাংলা।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)