প্রায় চার দশক পরে ২০২৩ সালে হাওড়া সেতুর পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ শুরু করেছিলেন কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ। ভারতীয় রেলের সমীক্ষক সংস্থা রাইট্সেরতত্ত্বাবধানে দু’বছর ধরে সেতুর বিভিন্ন অংশ খতিয়ে দেখে সমীক্ষক সংস্থার পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি প্রাথমিক রিপোর্ট কলকাতা তথা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর কর্তৃপক্ষেরহাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই রিপোর্টে সেতুর দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে তার ‘লাইভ মনিটরিং’ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওই ব্যবস্থায় একাধিক সেন্সর সেতুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রতি মুহূর্তে তথ্য পাঠাতে থাকবে। কোথাও কোনও আশঙ্কার পরিস্থিতি তৈরি হলে সঙ্গে সঙ্গে নজরদারির দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের মোবাইলে সতর্কবার্তা পাঠাবে ওই সেন্সর।
বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, বাতাসের গতি, তাপমাত্রা, সেতুতে যান চলাচলের সময়ে সেতুর কম্পন-সহ একাধিক বিষয় নজরদারির আওতায় আনা হবে। সেতুর ভার বহনের ক্ষমতার উপরে কোনও চাপ তৈরি হচ্ছে কিনা, তা-ও নজরে রাখা হবে ওই ব্যবস্থার মাধ্যমে।বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান সম্রাট রাহী বলেন, ‘‘প্রাথমিক রিপোর্ট আমরা হাতে পেয়েছি। সেতুর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের মতো কিছু মেলেনি। তবে, দীর্ঘমেয়াদে নিখুঁত নজরদারিরস্বার্থে সেন্সর বসানোর কথা ভাবা হয়েছে।’’
এর আগে ১৯৮৩ সালে সেতুর অনুপুঙ্খ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। প্রায় পাঁচ বছর ধরে পরীক্ষার পরে বেশ কিছু সমস্যার বিষয় উঠে আসে। পরে সেতুর ভার কমানোর পাশাপাশি, ২০০০ সাল পর্যন্ত সেতুর মেরামতি চলে। ২০০৫ সালে ওই সেতুর নীচের দিকে একটি জাহাজের ধাক্কা লেগে আংশিক ক্ষতি হয়। পরে তা মেরামত করা হয়।
এ বারের সমীক্ষায় রাইট্স ইংল্যান্ডের রেন্ডেল সংস্থার সাহায্য নিয়েছিল। সেতুর মূল নকশা ওই সংস্থার তৈরি। সেতুর স্বাস্থ্যরক্ষায় বছরখানেকের মধ্যে পুরো হাওড়া সেতু রং করার পরিকল্পনা রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের। পাশাপাশি, ঐতিহ্যবাহী হাওড়া সেতুকে বিশ্বের কাছে কলকাতার অন্যতম প্রধান দ্রষ্টব্য হিসাবে তুলে ধরতে সেতুকে বিশেষ আলোয় সাজানোর পরিকল্পনাও করা হয়েছে। সেতুর কাঠামো ছাড়াও বিভিন্ন দিক থেকে সেতুকে বিশেষ আলোয় সাজানো হবে। স্বাধীনতা দিবস, দুর্গাপুজোর মতো বছরে ৬০টি বিশেষ দিনকে চিহ্নিত করে ওই বিশেষ আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ওই সব দিনে ৫ থেকে ১০ মিনিটের বিশেষ ‘শো’ চলবে। বিশেষ বাজনার সঙ্গে ওই আলোকসজ্জা নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে দেখা যাবে। সেতুকেকেন্দ্র করে প্রযুক্তির সাহায্যে নিজস্বী তোলার ব্যবস্থা করার কথাও ভাবা হয়েছে। আগামী বছরের পয়লা বৈশাখের মধ্যে ওই ব্যবস্থা চালু হবে বলে সূত্রের খবর।