বাড়ছে ঠিকাদাররাজ, ফিকে হচ্ছে যৌথ বন পরিচালন ব্যবস্থার ঐতিহ্য! টান পড়ছে পেটে। জঙ্গলরক্ষায় মমতা কমছে স্থানীয়দের।
বন দফতরেও এখন দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারের মাধ্যমে নানা কাজ হচ্ছে। সামাজিক বনসৃজন থেকে বনাঞ্চলে বাঁধ, পুকুর, জলাধার নির্মাণেও ঠিকাদার নিয়োগ করছে বন দফতর। অভিযোগ, ঠিকাদাররা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাইরের শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। এতেই কপাল পুড়ছে জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটি (জেএফএমসি) বা যৌথ বন পরিচালন কমিটির। অনেক জায়গাতেই কমিটির সদস্যরা কাজ হারাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। ফলে আগ্রহ হারিয়ে বন-জঙ্গলের উপর স্থানীয় মানুষের মায়া-মমতাও কমছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
বাম আমলে আটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে যৌথ বন পরিচালন ব্যবস্থা গড়ে তোলে বন দফতর। এর উদ্দেশ্যই ছিল, বন-জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার মানোন্নয়ন। এই ব্যবস্থায় সাফল্য আসে মেদিনীপুরের আরাবাড়ি বনাঞ্চলে। এতে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন তৎকালীন ডিএফও অজিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ব্যবস্থা একসময় বন-জঙ্গল রক্ষায় 'মডেল' হয়ে উঠেছিল। সেই ব্যবস্থাই কি এখন ফিকে হচ্ছে? প্রশ্ন উঠছে বন দফতরের অন্দরেই।
জেএফএমসি-র সদস্যরা বন দফতরের স্থায়ী কর্মী নন, তবে এই কমিটিতে রাখা হয় বন বা জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার বসবাসকারী পরিবারের একজন করে সদস্যকে। এক একটি কমিটিতে ৫০ থেকে ১০০ বা তারও বেশি সদস্য থাকেন। বন দফতরের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি রেঞ্জেই এই কমিটি গঠিত হয়, রেঞ্জ এলাকায় অনেক গুলি করেই এই জেএফএমসি থাকে। মূলত, বন দফতরের সঙ্গে যৌথভাবে বন - জঙ্গলের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করাই এঁদের কাজ। এ সবের কাজের জন্য জেএফএমসি পায় বনজ সম্পদ বিক্রির লভ্যাংশের উপর ৪০ শতাংশ অর্থ। এ ছাড়া বন দফতরের বনসৃজন সহ বনাঞ্চলে বাঁধ, পুকুর, জলাশয় প্রভৃতি নির্মাণ কাজেও এই কমিটির সদস্যদের যুক্ত করা হয়। বিনিময়ে তাঁরা মজুরিও পান। তাঁদের সেই কাজেই অন্তরায় হয়ে উঠছে ঠিকাদারপ্রথা, অভিযোগ এমনই।
অভিযোগ, বনসৃজন বা বন দফতরের বাঁধ, পুকুর, জলাশয় প্রভৃতি নির্মাণ কাজে বরাত দেওয়া হচ্ছে ঠিকাদারদের। বন দফতর থেকেই এই বরাত দেওয়া হচ্ছে। ঠিকাদাররা অনেক সময় বাইরের শ্রমিক এনে কাজ করাচ্ছেন। এতে কাজ কমছে স্থানীয় জেএফএমসি-র সদস্যদের। বন দফতরের এক রেঞ্জার বলছেন, "এই কমিটির লোকেরা আগে যেখানে বছরে মাস ছয়েক কাজ পেতেন, এখন ঠিকাদার নির্ভর কাজ হওয়ায়, তাঁরা মেরেকেটে এক মাস কাজ পান।