• বিমান ছিনতাই ও সন্ত্রাসবাদী হামলার মোকাবিলায় পূর্ণাঙ্গ মহড়া বিমানবন্দরে
    আনন্দবাজার | ২১ জুলাই ২০২৫
  • বিমান ছিনতাই কিংবা বিমানবন্দরে আচমকা সন্ত্রাসবাদী হামলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে কী ভাবে পুরোটা সামলাতে হবে, তা নিয়ে শনিবার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত টানা পূর্ণাঙ্গ মহড়া চালালেন কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ, রাজ্য পুলিশ এবং ন্যাশনাল সিকিয়োরিটি গার্ডের (এনএসজি) আধিকারিক ও কমান্ডোদের তত্ত্বাবধানে ওই মহড়া চলে। এ ছাড়া, বিমানবন্দরের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে দ্রুত সমন্বয়সাধন করে কী ভাবে আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়, সেটাও পরীক্ষা করা হয় ওই মহড়ার মাধ্যমে। বিমান ছিনতাই এবং সন্ত্রাসবাদী হামলার মতো ঘটনা মোকাবিলার জন্য দু’টি পৃথক মহড়ার আয়োজন করা হয়েছিল।

    শুরুতে একটি এ-৩২০ এয়ারবাসে ৭৫ জন যাত্রী নিয়ে রাত ৯টা ৩৪ মিনিটে বিমান ছিনতাইয়ের পরিস্থিতি সামলানোর মহড়া শুরু হয়। এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলে (এটিসি) আচমকা বিমান ছিনতাইয়ের বার্তা আসা মাত্র বিশেষ কমিটি দ্রুত বৈঠকে বসে করণীয় স্থির করে। বিমানটিকে রানওয়ে থেকে সরিয়ে আইসোলেসন বে-তে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়। সিআইএসএফের কুইক রেসপন্স টিম, আইবি (ইন্টেলিজেন্স বুরো), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয় ছদ্ম ‘বিমান ছিনতাইকারীদের’। তার মধ্যেই ন্যাশনাল সিকিয়োরিটি গার্ডের ‘কাউন্টার হাইজ্যাক টাস্ক ফোর্স’ সক্রিয় হয়ে ওঠে। টানা কয়েক ঘণ্টা আলোচনা চালানোর পরেও শেষ পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় এনএসজি-র কমান্ডো বাহিনী নিপুণ প্রস্তুতি নিয়ে অভিযান চালিয়ে বিমানে প্রবেশ করে যাত্রীদের উদ্ধার করে আনে। ওই মহড়া সম্পূর্ণ হয় রাত ২টো ১৫ মিনিট নাগাদ।

    অন্য আর একটি মহড়ায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালন অফিসের দখল সন্ত্রাসবাদীদের হাতে চলে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। ১২ জন আধিকারিককে পণবন্দি করে ফেলা হয়। শুরুতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্স এলেও ‘সন্ত্রাসবাদী’ দলের শক্তি বেশি হওয়ায় তাদের সঙ্গে তারা সামলে উঠতে সক্ষম হয়নি। কিছু ক্ষণের মধ্যে রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের কাছ থেকে এনএসজি প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে নতুন ভাবে অভিযানের পরিকল্পনা করে। টানা কয়েক ঘণ্টা লড়াইয়ের পরে ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ ছয় সন্ত্রাসবাদীকে কাবু করে পণবন্দি হয়ে থাকা আধিকারিকদের উদ্ধার করা হয় ওই মহড়ায়।

    এই দুই মহড়ায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, সিআইএসএফ, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল, বিমান সংস্থা, রাজ্য পুলিশ, ইন্টেলিজেন্স বুরো, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং এনএসজি-র মধ্যে নিপুণ সমন্বয় এবং দ্রুত সক্রিয় হওয়ার তৎপরতা যাচাই করা হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার স্বার্থে অনুষ্ঠিত এই মহড়ায় অংশগ্রহণকারী সব সংস্থাকে কর্তৃপক্ষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে নিয়মিত ব্যবধানে বিভিন্নআপৎকালীন পরিস্থিতি নিয়ে মহড়া চললেও পূর্ণাঙ্গ চেহারায় বিমান ছিনতাই এবং সন্ত্রাসবাদী হানা মোকাবিলার মহড়ার আয়োজন সাম্প্রতিক অতীতে হয়নি। সে দিক থেকে টানা সাত-আট ঘণ্টার এই দুই মহড়াকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষই।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)