ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বাংলা ও বাঙালির উচ্চ স্থান যুগে যুগে কালে কালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এসেছে ভারতের বুকে। এ কোনো নতুন কথা নয়। বরং সম্প্রতি সেই উচ্চ স্থানে উপুর্যপরি আঘাতই নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে আমবাঙালিকে। যেভাবে বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর হেনস্তার খবর আসছে, বাংলা ভাষায় কথা বললেই জুটছে ‘বাংলাদেশি’ তকমা, ভুগতে হচ্ছে ‘পুশব্যাক’ যন্ত্রণা, তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়। ইতিমধ্যেই নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য এনআরসি নোটিস পেয়েছেন কোচবিহারের বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসী। এ ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। বাংলার শাসকদল হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস এনিয়ে এতটুকু ছেড়ে কথা বলছে না। আজ, একুশে জুলাইয়ের শহিদ দিবসে (TMC 21 July Rally), ধর্মতলার মেগা মঞ্চ থেকে ফের সেই বাঙালি অস্মিতায় শান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এদিনের মঞ্চে উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে পাশে নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুললেন, ”কেন অসমের বিজেপি সরকার এই রাজবংশী ভাইকে NRC নোটিস পাঠাল? কী অধিকারে? জবাব দাও।”
২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে হাই ভোল্টেজ জনসভা এই একুশে জুলাই। একাধারে সেই লড়াইয়ের কৌশল নির্ধারণ ও অন্যদিকে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্যে আজকের মঞ্চকে যথাযথভাবে ব্যবহার করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা প্রত্যাশিত ছিল। তিনি বক্তব্য রাখতে উঠে সেটাই করলেন। ভিনরাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক ‘হেনস্তা’র মতো সাম্প্রতিক জ্বলন্ত সমস্যা তিনি তুলে আনলেন একুশের এই মেগা সমাবেশে। বরাবরের মতো তীব্র নিন্দায় সুর চড়ালেন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে। এনআরসি নোটিস পাওয়া উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে মঞ্চে দাঁড় করিয়ে দিলেন কড়া বার্তা। তাঁর কথায়, “অসমের মুখ্যমন্ত্রী, আপনি অসম সামলাতে পারছেন না। আর বাংলায় নাক গলাচ্ছেন। সুস্মিতা দেবকে বলব দরকার হলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। দরকার হলে আমরা সবাই যাব। দেখব কতজনকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখেন।” হুঁশিয়ারির সুরে তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য, “বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচার হলে ছেড়ে দেব না। আমি ধরলে ছাড়ি না। আমাদের আটকে রাখা যায় না। রোখা যায় না।”
আসলে যে কোনও জনবিরোধী ইস্যুকে কীভাবে আন্দোলনে পরিণত করতে হয়, নিজের জীবন অভিজ্ঞতা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতটা ভালো জানেন, তা এদেশের রাজনৈতিক মহলে বিরল, সে কথা নতুন করে বলার অবকাশ নেই। বাঙালি হেনস্তাও তাই স্বাভাবিকভাবে প্রতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। বিরোধীরা বলতেই পারেন, একে নিছক ছাব্বিশের ভোটে ব্যবহার করছে শাসকদল, কিন্তু ভুললে চলবে না যে আন্দোলনে পোড় খাওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে ‘দিদি’র ভূমিকা পালন করছেন, অর্থাৎ মহীরূহের মতো আগলে রেখেছেন রাজ্যবাসীকে, তা যে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রেই বিশেষ একটা দেখা যায়নি।