গ্রামে গ্রামে ঘুরে মিলছে না পড়ুয়া, মাত্র দু’জনকে নিয়ে ক্লাস জুনিয়র হাইস্কুলে
বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: দোতলা স্কুলভবন। বড় বড় তিনটি ক্লাসরুম। সবমিলিয়ে গোটা পঞ্চাশেক বেঞ্চ। কিন্তু সাকুল্যে দু’জন পড়ুয়া! তাদের নিয়েই সোমবার ক্লাস চলল জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া নয়াপাড়া জুনিয়র হাইস্কুলে।
কেন এই হাল? স্কুলের টিচার ইনচার্জ নবনীতা দাসের বক্তব্য, গ্রামে গ্রামে ঘুরেও পড়ুয়া পাচ্ছি না। ছেলেমেয়েদের খেলাধুলোর কথা বলেও স্কুলে আনা যাচ্ছে না।
স্কুলটির এই হাল অজানা নয় জলপাইগুড়ি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বালিকা গোলে’র। তিনি বলেন, বেশিরভাগ জুনিয়র হাইস্কুলের পরিস্থিতি কমবেশি একই রকম। আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বলছি, যেভাবেই হোক পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়াতে হবে। শিক্ষকরা চেষ্টা করছেন না, এমনটা নয়। তবে কিছুতেই যেসব স্কুলে পড়ুয়া বাড়ছে না, সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। ডিআই বলেন, দু-তিনজন পড়ুয়া নিয়ে একটা জুনিয়র হাইস্কুল চলতে পারে না। যেসব স্কুলের এরকম হাল, সেগুলি নিয়ে শীঘ্রই পদক্ষেপ করব।
এদিন নয়াপাড়া জুনিয়র হাইস্কুলে গিয়ে দেখা যায়, দু’টি বেঞ্চে দু’জন পড়ুয়া বসে রয়েছে। তাদের একজন সপ্তম শ্রেণির ভাগ্যশ্রী বর্মন। অন্যজন ষষ্ঠ শ্রেণির কার্তিক রায়। কিন্তু স্কুলটি তো পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। তাহলে বাকি ক্লাসের পড়ুয়ারা কোথায়?
রাখঢাক না রেখেই স্কুলের টিচার ইনচার্জ বলেন, এবার অনেক চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণিতে একজনও পড়ুয়া ভর্তি হয়নি। ষষ্ঠ শ্রেণিতে একজন রয়েছে। এদিন সে স্কুলে এসেছে। খাতায়কলমে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়ার সংখ্যা সাতজন। কিন্তু এদিন এসেছে মাত্র একজন। অষ্টম শ্রেণিতে দু’জন পড়ুয়া ভর্তি হলেও তারা অনিয়মিত।
এমনিতেই পড়ুয়ার সংখ্যা তলানিতে। তার উপর স্কুলে নাম থাকা সত্ত্বেও ক্লাসে গরহাজির কেন? টিচার ইনচার্জের সাফাই, আমরা দু’জন শিক্ষক। আমি ক্লাস করাচ্ছি। অন্য শিক্ষক ডিআই অফিসে কাজে গিয়েছেন। তাহলে বাড়ি গিয়ে পড়ুয়াদের ধরে নিয়ে আসার কাজ কে করবেন? তাঁর দাবি, আমরা টাকা দিয়ে পড়ুয়াদের জন্য খেলার সরঞ্জাম কিনেছি। বলেছি, ‘তোরা অন্তত খেলার জন্য হলেও স্কুলে আয়’। কিন্তু তারপরও ছেলেমেয়েরা যদি স্কুলে না আসে, আমাদের কী করার আছে!
জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের নয়াপাড়া জুনিয়র হাইস্কুল চত্বরেই রয়েছে প্রাইমারি। সেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা খুব একটা কম নয়। চতুর্থ শ্রেণি পাশের পর সেখান থেকে ছেলেমেয়েরা একই ক্যাম্পাসে জুনিয়র হাইস্কুলে ভর্তি হয় না কেন? জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষিকা নবনীতা দাসের দাবি,আমরা অনেকবার প্রাইমারি শিক্ষকদের বলেছি। অভিভাবকদেরও বলা হয়েছে। তারপরও পড়ুয়া মিলছে না। - নিজস্ব চিত্র