নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: পুরুলিয়ার আড়ষার যুবক বিষ্ণু কুমারের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় চাপানউতর ক্রমশই বাড়ছে। পরিবারের অভিযোগ, পুলিস মারধর করায় যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিসের দাবি, কোনওরকম নির্যাতন ওই যুবকের উপর করা হয়নি। রবিবার পুরুলিয়া মেডিক্যালে বিষ্ণুর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। ময়না তদন্তের রিপোর্টের দাবিকেই সমর্থন করছে। যদিও সেই রিপোর্টে সন্তুষ্ট নয় মৃতের পরিবার। এর প্রতিবাদে তারা এদিন দেহ নিতে অস্বীকার করে।
প্রসঙ্গত, মোবাইল চোর সন্দেহে গত ১৬ জুলাই ওই যুবককে থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের অভিযোগ, থানা থেকে বাড়ি ফেরার পর বিষ্ণু অসুস্থ হয়ে পড়েন। খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেন। থানায় তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে তিনি পরিবারের সদস্যদের জানান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে গত শনিবার তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ, পুলিসি নির্যাতনের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি থানায় জানাতে গেলে অভিযোগ নেওয়া হয়নি বলে দাবি পরিবারের। রবিবার রাতে যুবকের ভাই সমন কুমার পুলিসের কাছে মেল মারফত অভিযোগ জানান। এরপর ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিস। অভিযোগকারীর বয়ান রেকর্ড করার জন্য তাঁকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। অভিযোগকারীর বাড়ির দরজায় এই মর্মে পোস্টারও সাঁটিয়ে দিয়ে গিয়েছে পুলিস।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে জেলার পুলিস সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ভিডিওগ্রাফি করে ওই যুবকের দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্ট সামনে এসেছে। রিপোর্টে ওই যুবকের দেহে অত্যাচারের কোনও প্রমাণ মেলেনি। লিভার, কিডনি ও হার্টের সমস্যার কারণেই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।’ সেইসঙ্গে পুলিস সুপারের সংযোজন, ‘এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, এই ঘটনায় যদি কেউ জড়িত থাকে, তা সে যেই হোক না কেন, আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’
যদিও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সন্তুষ্ট নয় যুবকের পরিবার। তাই পরিবারের সদস্যরা দেহ নিতেও অস্বীকার করেন। পরিবারের দাবি, পুলিসের তরফে মরদেহ নেওয়ার জন্য তাঁদের কাছে বারংবার আবেদন জানানো হয়। কিন্তু মৃত্যুর বিচার না হওয়া পর্যন্ত দেহ নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
যুবকের মা গৌরীবালা কুমার বলেন, থানায় যাওয়ার আগে আমার ছেলে ভালো ছিল। থানা থেকে এসে কেন ও অসুস্থ হয়ে পড়ল? পুলিস নিজেদের বাঁচাতে চাইছে। যুবকের বউদি মালতী কুমার বলেন, এরকম রিপোর্ট যে আসবে তা আমরা জানতাম। যেদিন থানা থেকে ফিরল, সেদিন থেকে ওর গোটা শরীরে ব্যথা। যন্ত্রণায় খাওয়া দাওয়া ভুলেছিল। এখন পুলিস অত্যাচার করেনি বললেই হবে! মৃতের স্ত্রী নমিতা কুমার বলেন, স্বামীর মৃত্যুর বিচার চাই। আমরা পুনরায় দেহের ময়নাতদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
বিষ্ণুর মৃত্যুর বিচার চেয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সিপিএম, বিজেপি সহ অন্যান্য বিরোধীরা। মৃতের ভাইকে নিয়ে রবিবার কলকাতা রওনা দেয় বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির সাহায্য নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও দায়ের করেছে মৃতের পরিবার। বিজেপির জেলা সহ সভাপতি গৌতম রায় বলেন, আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রয়েছে। সোমবার মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাত, জেলা সভাপতি শঙ্কর মাহাত। যুবকের দেহ নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে সাংসদের কাছে অভিযোগ করেন পরিবারের সদস্যরা। এদিন সাংসদ বলেন, আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব। সিপিএমের যুব সংগঠনের সম্পাদক চিরঞ্জিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, আমরা দলীয়ভাবে ওই পরিবারটির পাশে রয়েছি। পরিবারটিকে সবরকম সহযোগিতা করা হবে। মৃত বিষ্ণু কুমারের বাড়িতে পুরুলিয়ার সাংসদ ও বিজেপির জেলা সভাপতি। -নিজস্ব চিত্র