নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: হাঁসখালির শৌচালয়কাণ্ডে সরকারি টাকা লুটের জেরে জেলার বাকি সব শৌচাগার নিয়ে তদন্তে নামল প্রশাসন। সোমবার থেকে ফিল্ডে নেমে কাজ খতিয়ে দেখেন অফিসাররা। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে নদীয়া জেলা পরিষদের তরফে তৈরি শতাধিক শৌচাগার ঠিকমতো বানানো হয়েছে কি না, তা দেখা হবে। মূলত যে সমস্ত শৌচাগারের বিল পেমেন্ট হয়ে গিয়েছে, সেগুলোই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশাসনের তরফ থেকে চারটে টিম বানানো হয়েছে।
এদিন নাকাশিপাড়ার বিলকুমারি পঞ্চায়েত এলাকার মাদ্রাসা, চকবিহারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার তৈরির কাজ খতিয়ে দেখেন জেলা পদস্থ আধিকারিকরা। পাশাপাশি বাগবেড়িয়া পঞ্চায়েতের কুলতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাবলারি পঞ্চায়েতের দক্ষিণ কালীতলা মন্দির সংলগ্ন শৌচাগার পরিদর্শন করা হয়। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তদন্ত করতে গিয়ে সমস্ত শৌচাগারের সঙ্গে ছবি তুলতে হবে অফিসারদের। তদন্ত প্রক্রিয়াতেও কোনোও খামতি রাখতে চাইছে না প্রশাসন। নদীয়া জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অনুপকুমার দত্ত বলেন, যে সমস্ত শৌচাগারের বিল পেমেন্ট করা হয়েছে, সেগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। তার জন্য একটা টিম তৈরি করা হয়েছে। অফিসাররা ফিল্ডে গিয়ে তদন্ত করছেন। পাশাপাশি হাঁসাখালিতে শৌচাগার তৈরির বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তার বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীয়া জেলা পরিষদের তরফ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১৬২টি শৌচাগার তৈরি করা হয়েছিল। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ১৫৮টি শৌচাগার বানানো হয়েছে। অর্থাৎ বিগত দু’ বছরে নদীয়া জেলায় তৈরি হয়েছে ৩২০টি শৌচাগার। স্বচ্ছ ভারত মিশনের আওতায় এই কাজ করা হয়েছে। যার মধ্যে এখনও পর্যন্ত জেলাজুড়ে ১৩৯টি শৌচাগারের ঠিকাদারদের বিল পেমেন্ট করা হয়েছে। সেই সমস্ত কাজকেই তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। কাজ নিয়ে ঠিকাদাররা কোনওরকম দুর্নীতি করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে আরোও জানা গিয়েছে, প্রতিটি শৌচাগার করতে ৩ লক্ষ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা করে খরচ করা হয়েছে। যার মধ্যে পঞ্চদশ অর্থ কমিশন থেকে ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং স্বচ্ছ ভারত মিশন থেকে ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৫ কোটি ৫৩ লক্ষ ৯১ হাজার ৫০০ টাকার বিল পেমেন্ট হয়েছে। এরই মধ্যে হাঁসখালি ব্লকের বগুলা-২ পঞ্চায়েতের একটি স্কুলে শৌচাগার তৈরি নিয়ে কেলেঙ্কারি সামনে এসেছে। কাজ না করেই সরকারি টাকা হাতানো হয়েছে। কারণ ওই স্কুলে হাঁসখালি পঞ্চায়েত সমিতির তরফ থেকে একটি শৌচাগার বানানো হয়েছিল গত বছর ডিসেম্বর মাসে। তারপর ঘটনাচক্রে ওই একই জায়গায় শৌচাগার বানানোর জন্য প্রকল্প জমা পড়ে জেলা পরিষদে। সেই প্রকল্প অনুমোদনও করা হয় প্রশাসনের তরফ থেকে। কিন্তু এরপর দেখা যায়, ঠিকাদার সংস্থা পঞ্চায়েত সমিতির কাজের ফলক তু্লে দিয়েছে। তার পরিবর্তে সেই জায়গায় নদীয়া জেলা পরিষদের টেন্ডার বিবরণ লেখা ফলক সাঁটিয়ে দেয়। যার জেরেই জেলার অন্যত্র এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে কি না, তার তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন।