নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: ধর্মতলায় শহিদ দিবসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভিনরাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্তার বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভিনরাজ্যে বাংলা বলে এরাজ্যের যে শ্রমিকরা নির্যাতিত হয়েছেন, রাজ্য সরকার তাঁদের পাশেই রয়েছে। যাঁদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল, মামলা করে তাঁদের ছাড়িয়ে আনা হয়েছে-একথা জানিয়ে মমতা পরিযায়ী শ্রমিকদের আশ্বস্ত করেছেন। শুধু তাই নয়, ভিনরাজ্যে নির্যাতিত বাঙালি শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনে আবার তিনি ভাষা আন্দোলন শুরুর ডাকও দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে স্বস্তি বোধ করছেন মুর্শিদাবাদ জেলার পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।
প্রতিবছর মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে প্রায় ১২-১৫ লক্ষ মানুষ ভিনরাজ্য ও ভিনদেশে কাজ করতে যান। তাঁদের বেশিরভাগই নির্মাণশ্রমিকের কাজ করেন। কেউ কেউ ভিনরাজ্যে হরেক সামগ্রী ফেরি করেন। একটু বেশি রোজগারের আশায় ঘর সংসার ফেলে ভিনরাজ্যে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন যে মানুষগুলি-সম্প্রতি তাঁদেরই দিশেহারা অবস্থা হয়েছিল। ভিনরাজ্যে বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিস। কোনও ডকুমেন্ট দেখিয়েই রেহাই মিলছে না। ভিনরাজ্যে স্বজনের গ্রেপ্তারির কথা জানতে পেরে বাড়ির লোকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে। এমনকী, জেলার কয়েকজনকে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ও করা হয়েছিল। প্রতি ক্ষেত্রেই পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছিল রাজ্য সরকার। জেলা পুলিস ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় পরিচয়পত্র ভেরিফিকেশনের পর ওই শ্রমিকরা ঘরে ফিরেছিলেন।
শুধু গ্রেপ্তারি নয়, ভিনরাজ্যে অত্যাচারের অভিযোগও উঠেছে। সম্প্রতি ওড়িশার ঝাড়সুগুড়ায় পুলিস মুর্শিদাবাদের ১২জন শ্রমিককে আটক করে। ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য তাঁদের রামপুর হিল টপে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের উপর অত্যাচার, খাবার ও পানীয় জল না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই শ্রমিকদের পরিবার বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অবশেষে জেলা পুলিস ও প্রশাসনের সহযোগিতায় তাঁদের ফেরানো হয়। জেলার অনেক শ্রমিক ভিনরাজ্যে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। তাঁদের নামের তালিকা তুলে ধরে এদিন বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন মমতা। তিনি বলেন, ‘হাজারজন বাঙালিকে বিভিন্ন রাজ্যে আটক করা হয়েছে। আমাদের কোনও ভাষা নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু বাংলার উপর কেন সন্ত্রাস হবে? প্রয়োজনে আবার ভাষা আন্দোলন হবে।’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী একটি কাগজ তুলে ধরে দাবি করেন, অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার একটি সার্কুলার পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নাকি একমাস পর্যন্ত আটক করে রাখা যায়। এদিন মমতা বলেন, ‘বাংলার উপর সন্ত্রাস চলছে। বিজেপি এখন ঠিক করে দিতে চায়, কে কী খাবে, কে মাছ খাবে, কে কার মাথা খাবে।’
কয়েকদিন আগেই হরিহরপাড়ার নাজিমুদ্দিন মণ্ডল মহারাষ্ট্রে কাজে গিয়ে অত্যাচারিত হয়েছেন। নাজিম সহ বাংলার পাঁচ শ্রমিককে মুম্বই পুলিস গ্রেপ্তার করেছিল। ভারতীয় পরিচয়পত্র দেখালেও তাঁদের বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করা হয়। জেলা পুলিস ও রাজ্য সরকারের তৎপরতায় তাঁদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে নাজিমুদ্দিন কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। তিনি বলেন, গ্রামে সেভাবে রাজমিস্ত্রির কাজ পাচ্ছি না। এদিন মুখ্যমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, তা শুনে ভালো লাগল। ভিনরাজ্যে ১৯৮০সালের জমির দলিল দেখিয়েও লাভ হচ্ছে না। আধার, ভোটার, প্যান কার্ড কিছুই মানছে না। আমরা নিজের দেশে নিশ্চিন্তে কাজ করতে চাই। নাজিমুদ্দিনের স্ত্রী বলেন, সকালে ও বাড়িতেই ছিল। পরে কালীতলা মোড়ে গিয়ে টিভিতে মমতার ভাষণ শুনেছে। আমরা জানতাম, এই সরকার আমাদের মতো গরিব পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা ভাববে। ভিনরাজ্যে বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেপ্তারি এড়াতে আমাদের বিশেষ কার্ড করে দিলে ভালো হয়।