• অনুপ্রবেশ: বিএসএফের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন মমতার
    বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: অনুপ্রবেশ যদি হয়ে থাকে, তবে সেটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অধীনে থাকা বিএসএফের ব্যর্থতার কারণেই হয়েছে। সোমবার ধর্মতলায় শহিদ দিবসের মঞ্চে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে এমনই সোজা ব্যাটে খেললেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুপ্রবেশের দায় রাজ্য সরকারের নয়, বিএসএফের-সেটা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে তার কয়েকঘণ্টা আগে মুর্শিদাবাদ জেলায় পুলিসের হাতেই গ্রেপ্তার হল বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি। রানিনগর ও লালগোলা-দু’টি জায়গাতেই এই অনুপ্রবেশ রুখতে ব্যর্থ হয় বিএসএফ। তাদের কড়া পাহারা সত্ত্বেও কীভাবে এত বাংলাদেশি ভারতে ঢুকে পড়ছে, তা নিয়ে অনেকদিন ধরেই সীমান্ত এলাকার মানুষের মনে প্রশ্ন ছিল। এদিন তাঁদের সেই প্রশ্নই তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।

    মুর্শিদাবাদে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দুই প্রান্তে আটজন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার রাতে রানিনগরের পুরাতন ডিগ্রি এলাকায় পুলিস চারজনকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে, তাদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি। কোনও বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তিন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃত তারিকুল ইসলাম, আবদুর রহমান ও মহম্মদ সাহেব আলি বাংলাদেশের রাজশাহীর বাসিন্দা।

    লালগোলার আটরশিয়া থেকেও পাঁচ বাংলাদেশি এবং দুই ভারতীয় নাগরিককে পুলিস গ্রেপ্তার করেছে। ওই পাঁচ বাংলাদেশি আটরশিয়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে স্থানীয় একটি বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছিল। দু’টি জায়গাতেই বিএসএফ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সীমান্তরক্ষীদের পাহারা এড়িয়েই অবাধে বাংলাদেশিরা এদেশে ঢুকে পড়ছে। গত একমাসে সীমান্তবর্তী এলাকার পুলিস লাগাতার বাংলাদেশিদের পাকড়াও করেছে। তাদের গ্রেপ্তারির পাশাপাশি নিয়ম অনুযায়ী ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা রুজু করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুপ্রবেশকারীরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় গ্রামে ঘোরাঘুরি করার সময় ধরা পড়ছে।

    জলঙ্গি সীমান্তের ঘোষপাড়ার এক মহিলা বলেন, মাঠের ওপারেই বাংলাদেশ। দিনেরবেলায় বিএসএফের ভালো টহল থাকলেও রাতে তো কোনও টহল নেই। অনেক সময় চোরাচালানকারী এবং ওই দেশের লোকজন এখান দিয়ে ঢুকে পড়ে। বেশিরভাগ বাংলাদেশিকে পুলিসই ধরছে।

    কয়েকদিন আগে বহরমপুরে বিজেপি অফিসে সাংবাদিক সম্মেলন করেন দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি শাখারভ সরকার। তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২২টি বিধানসভায় প্রায় ২লক্ষ ৪৩হাজার বাংলাদেশি ভোটার আছে। ঠিকমতো ভেরিফিকেশন করলে সব সামনে আসবে। বাংলাদেশিরা ভারতে ঢুকে অনায়াসে ভোটার তালিকায় নাম তুলছে। জলঙ্গি ও সাগরপাড়ায় এমন বহু ভোটার আছে। তবে অনুপ্রবেশ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করলেও বিজেপি নেতারা কিছুতেই বিএসএফের কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ মানতে চান না। পদ্মের বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক লাল্টু দাস বলেন, বিএসএফ সীমান্তে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে। তারা তো জেলা প্রশাসনের নির্দেশেই কাজ করে। তাই অনুপ্রবেশ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিএসএফের আধিকারিকদের দাবি, বর্ষায় বড় হয়ে ওঠা পাটগাছের আড়ালে অনুপ্রবেশ চলছে। তা রুখতে কড়া নজর রাখা হচ্ছে।

    জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সীমান্তের গ্রামের ভিতর থেকে আমরা বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার করছি। ধৃতরা জেরায় জানাচ্ছে, খোলা সীমান্ত অনায়াসে পার করেই তারা এদেশে ঢুকছে।
  • Link to this news (বর্তমান)