সারের ব্যাপক কালোবাজারি, বাড়তি দাম নিয়ে ক্ষুব্ধ চাষিরা
বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, ডোমকল: শুরু হয়েছে ধান রোপণের মরশুম। সেই সময়ই ডোমকল মহকুমাজুড়ে শুরু হয়েছে সারের কালোবাজারি। একটি কিংবা দু’টি এলাকা নয় মহকুমার প্রায় সবক’টি ব্লকেই সারের এই কালোবাজারি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। চাষিদের অভিযোগ, সারের কালোবাজারি ব্যাপকভাবে শুরু হলেও কৃষিদপ্তরের তেমন নজরদারি নেই। আরও অভিযোগ, সারের এই চড়া দাম কোনও অভাবজনিত নয়, পুরোটাই পরিকল্পিত কালোবাজারি।
মহকুমার চাষিদের অভিযোগ, ১৩৫০ টাকার ৫০ কেজি বস্তার ডিএপির দাম নেওয়া হচ্ছে ১৯০০ টাকা। তবে শুধু ডিএপিই নয়, ১৬০০ টাকার ১০/২৬ সার বিক্রি হচ্ছে ১৮৫০ টাকায়, ১৫/১৫ কিংবা ২০/২০ সারের দামেও বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে কৃষকদের দাবি। এমনকী, ইউরিয়া, ফসফেট, পটাস, সালফেট, প্রায় সব ধরনের সার ও কীটনাশকের ক্ষেত্রেই মিলছে একই অভিযোগ। শুধু তাই নয়, বাড়তি দাম নিলেও বেশিরভাগ দোকানেই পাকা রশিদ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। চাষিরা বলছেন, রশিদ চাইলে দোকানদারের মুখ গোমড়া হয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ সময়েই প্রিন্টেড বিল দিতে রাজি হচ্ছেন না তাঁরা। খুব জোরাজুরি করলে হাতে গুঁজে দেওয়া হচ্ছে কাঁচা হাতে লেখা রশিদ। শুধুই কি তাই, কথা কাটাকাটি হলে সরাসরি জবাব আসছে, ‘পোষালে নিন, না হলে নাই।’
আর এতেই ক্ষুব্ধ চাষিরা। তাঁদের দাবি, প্রতিবছর এই সময়টা আসলেই বাজারে সারের দাম হু-হু করে বাড়তে শুরু করে। কালোবাজারি করে রীতিমতো সারের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়। এরপরে সুযোগ বুঝে চড়া দামে চলে বিক্রি। কিন্তু তারপরেও কেন এত নজরদারির অভাব কৃষিদপ্তরের? কেন এভাবে কালোবাজারি চললেও হাত গুটিয়ে বসে আছে কৃষিদপ্তর? নজরদারি কোথায়, সেই প্রশ্নও তুলছেন চাষিদের একাংশ।
রানিনগরের চাষি আজিত সরকার বলেন, প্রতিটা সারের দাম বেশি নিচ্ছে। ডিএপিতে তো ৫০০ টাকারও বেশি! অথচ রশিদ চাইলে হাতে লেখা কাগজ দিচ্ছে। এটা চলতে পারে না। কৃষিদপ্তর কি কিছু দেখছে না?
ডোমকলের আর এক চাষির অভিযোগ, বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আমরা বাধ্য হয়ে ওই দামেই কিনছি। সরকার নির্ধারিত রেট কেউ মানছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সার ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দাম নিতে হচ্ছে। আমাদের হাতেও কিছু নেই।
সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, সব জায়গাতে সারের কালোবাজারি চলছে। আমরা এই নিয়ে শীঘ্রই আন্দোলনে নামছি। এই বিষয়ে কৃষিদপ্তরের এক আধিকারিক জানান, নিয়মিত নজরদারি চলছে। ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। কৃষকদেরও বলা হয়েছে, কোথাও বেশি দাম নিলে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে। তারপরেও এইরকম অভিযোগ এলে সেগুলি আমরা খতিয়ে দেখছি।