অর্থ বরাদ্দ না করেও খবরদারি! বাংলার বাড়ির কাজ দেখতে কেন্দ্রের দল
বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: বাংলার গরিব মানুষের মাথার উপর ছাদ তৈরির টাকা দেয়নি কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২০২৪ সালে বাংলার বাড়ি প্রকল্প ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রকল্পে শুধুমাত্র পূর্ব মেদিনীপুরে ৫৫ হাজার মানুষ বাড়ি তৈরির জন্য দুই কিস্তিতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। এবার সেই বাংলার বাড়ি সহ একগুচ্ছ প্রকল্প পরিদর্শনে এল ন্যাশনাল লেভেল মনিটরিং (এনএলএম) টিম। বিষয়টি সামনে আসতে অনেকেই আওড়াচ্ছেন পুরনো একটি প্রবাদ—‘খেতে দেওয়ার মুরদ নেই, কিল মারার গোঁসাই।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মোট ১০টি স্কিমের কাজ খতিয়ে দেখতে পূর্ব মেদিনীপুরে ওই টিম পাঠিয়েছে মোদি সরকার। সোমবার তারা তমলুকে ডিএম অফিসে জেলা প্রশাসনিক অফিসারদের সঙ্গে মিটিং করে। সেখানে অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) বৈভব চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অনির্বাণ কোলে এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) নেহা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন। আজ, মঙ্গলবার থেকে তমলুক, এগরা-১ ও ২ ব্লকে মোট আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত পরিদর্শন করবেন টিমের সদস্যরা। কর্মশ্রী (এনআরইজিএ), ন্যাশনাল রুর্যাল লাইভলিহুড মিশন, দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ কৌশল্যা যোজনা, বাংলার বাড়ি, গ্রাম সড়ক যোজনা, ন্যাশনাল সোশ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম সহ মোট ১০টি স্কিমের কাজ ঘুরে দেখবেন। তারপর দিল্লি ফিরে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করবে। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী বলেন, ‘ন্যাশনাল লেভেল মনিটরিং টিম তিনটি ব্লকে মোট আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা পরিদর্শন করবে। মোট ১০টি কেন্দ্রীয় স্কিম পরিদর্শন করবে।’
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে একশো দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। পূর্ব মেদিনীপুরে প্রায় চার লক্ষ জবকার্ড হোল্ডার কাজ করেও পারিশ্রমিক পাচ্ছিলেন না। এই অবস্থায় ২০২৪ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য সরকার তাঁদের অ্যাকাউন্টে ১৮৫ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা দেয়। একশো দিনের কাজ বন্ধ থাকায় রাজ্য সরকার বিকল্প হিসেবে কর্মশ্রী প্রকল্প চালু করে রাজ্য। নানা কাজে বঞ্চিত শ্রমিকদের রুজিরুটির দিশা দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে, আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) ৫৫ হাজার উপভোক্তার তালিকা অনুমোদন সত্ত্বেও কেন্দ্র সরকার টাকা পাঠায়নি। ২০২২ সালে সার্ভের ভিত্তিতে উপভোক্তা তালিকা তৈরি হয়। কেন্দ্রের কাছে বার বার দরবার করেও কোনও লাভ হয়নি। স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার নায্য পাওনার দাবিতে দিল্লিতে ধর্না পর্যন্ত দিয়েছিলেন। তাতেও টনক নড়েনি কেন্দ্রের। শেষে বাংলার বাড়ি প্রকল্প চালু করে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো শুরু করে রাজ্য।
এহেন কেন্দ্রীয় বঞ্চনার পরও কেন্দ্র কোন উদ্দেশ্যে ন্যাশনাল মনিটরিং টিম পাঠিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। ১০ দিন ধরে সেই টিম এলাকা পরিদর্শন করে রিপোর্ট তৈরি করবে। জেলার ২৫টি ব্লকের মধ্যে তমলুক, এগরা-১ ও ২ ব্লকে পরিদর্শন করার জন্য বেছে নিয়েছে। মোট আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতে একাধিক প্রকল্পের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখবেন। জেলা পরিষদ থেকে একজন অফিসারকে ওই টিমের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও থাকবেন তিন ব্লকের তিনজন অফিসার।
তমলুক ব্লকের পদুমপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের রজত মাইতি বলেন, ‘আবাস থেকে একশো দিনের কাজের টাকা দেয়নি কেন্দ্র। সেই টাকা দিয়ে গরিব খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় টিম এলে আমরা বলব, এ রাজ্যের বকেয়া পাওনা যাতে কেন্দ্রীয় সরকার মিটিয়ে দেয়, সেই রিপোর্ট আগে জমা দিতে। যাঁরা টাকা দেয়নি, তাঁরা কি না হিসাব নিতে আসছেন! এর থেকে লজ্জার কিছু হয় না।’ এগরা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমিয় রাজ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় স্কিমে টাকা দেওয়া বন্ধ রেখেছে দিল্লির সরকার। এগরায় গ্রামীণ এলাকার মানুষজন তাঁদের বঞ্চনার কথা টিমের কাছে তুলে ধরতে প্রস্তুত।’