নিজস্ব প্রতিনিধি, কাঁথি: থানায় এফআইআর হতেই চেম্বারে তালা ঝুলিয়ে চম্পট দিলেন কাঁথির ভুয়ো এসবিবিএস ডাক্তার। ওই থানার হাতিশাল বাজারে দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় চেম্বার খুলে বসতেন বরুণ দাস। প্যাডে বিএসসি, এসবিবিএস(ক্যাল) লেখা থাকত। তাতেই প্রেসক্রিপশন লিখতেন। সেখানে নিজেকে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন চিকিৎসক বলেও উল্লেখ রয়েছে। অথচ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বর মিলিয়ে দেখা যায়, সেটি অন্যজনের। গোটা বিষয়টি সামনে আসার পর গত ১৮জুলাই কাঁথি থানায় এফআইআর করেন শহরের জালালখাঁবাড়ের বাসিন্দা প্রশান্ত সাহু। এরপরই পুলিস তদন্ত নামে। থানায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হওয়ার খবর জানতে পেরেই চেম্বারে তালা ঝুলিয়ে বেপাত্তা ওই ভুয়ো ডাক্তার। অভিযুক্ত ডাক্তারের নম্বরে ফোন করা হলে তাঁর সহায়ক পরিচয় দিয়ে একজন বলেন, বরুণবাবু এখন এলাকার বাইরে আছেন।
কাঁথির থানার হাতিশাল বাজারে অভিযুক্ত ভুয়ো ডাক্তারের বাড়ি। সেই বাজারে তাঁর চেম্বার রয়েছে। জানা গিয়েছে, একসময় কোয়াক ডাক্তার হিসেবে তিনি চেম্বার করত। কিন্তু, রোগীর ভিড় সেভাবে হতো না। এরপরই চেম্বারের ভোল বদলে হাতুড়ে চিকিৎসক থেকে রাতারাতি এমবিবিএস ডাক্তার হয়ে যায়। নিজেকে জেনারেল ফিজিশিয়ান বলে উল্লেখ করে নামের পাশে ডিগ্রি হিসেবে এমবিবিএস উল্লেখ করে। একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বরও বসিয়ে দেয়। এভাবেই চুটিয়ে প্র্যাক্টিস চলত। অনেকেই এই ভুয়ো ডিগ্রি সম্পর্কে জানার পরও বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন।
কাঁথি শহরের জালালখাঁবাড়ের প্রশান্তবাবু গত ৩০জুন পেটের সমস্যা নিয়ে ওই চিকিৎসকের চেম্বারে যান। শারীরিক পরীক্ষার পর তাঁকে একগুচ্ছ টেস্টের পরামর্শ দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে প্রাণের ঝুঁকির ভয় দেখিয়ে প্রচুর ওষুধও লিখে দেন। যদিও তিনি অন্য এক চিকিৎসকের কাছে গিয়ে জানতে পারেন, এত ওষুধ কিংবা টেস্টের কোনও প্রয়োজন নেই। অপ্রয়োজনীয় অনেক ওষুধ ও টেস্টের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এরপরই বরুণ দাসের ডিগ্রি নিয়ে ওই যুবকের সন্দেহ হয়। তিনি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন নম্বর যাচাই করে জানতে পারেন, অন্যের রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিয়ে ওই ডাক্তার প্র্যাক্টিস করছেন। সে আসলে ভুয়ো চিকিৎসক। ওই ঘটনা জানাজানি হতেই কাঁথি থানার হাতিশাল বাজারে নিজের চেম্বারে তালা দিয়ে আপাতত বেপাত্তা ভুয়ো চিকিৎসক। এরআগে নরঘাট থেকে একজন ভুয়ো চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছিল নন্দকুমার থানার পুলিস। অভিযুক্ত হিসেবে এমবিবিএস পরিচয় দিয়ে নরঘাট, নন্দীগ্রাম ও খেজুরিতে প্র্যাক্টিস করত। এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের লোকজন তার সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতে গিয়ে জানতে পারেন, সে ওড়িশার এক ডাক্তারের রেজিস্ট্রেশন নম্বর নকল করে প্র্যাক্টিস করত। আসলে সে ভুয়ো ডাক্তার। কাঁথির বরুণ দাসও একই কায়দায় প্র্যাক্টিস করত। তবে, কাঁথি থানার পুলিস এখনও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
ওই কেসের তদন্তকারী অফিসার চন্দন মাইতি বলেন, অভিযুক্ত চিকিৎসক চেম্বারে তালা ঝুলিয়ে গাঢাকা দিয়েছে। ওই চিকিৎসকের প্রতিবেশী তথা জেলা পরিষদের প্রাক্তন সহ সভাধিপতি মামুদ হোসেন বলেন, বরুণ এমবিবিএস ডাক্তার নয়। তবে ওই ডিগ্রি লিখে চেম্বার করত। এটা এখানকার সকলেই জানেন।