• ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতিতে ক্ষয়ক্ষতি একশো কোটি
    বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর:   টানা বৃষ্টির জেরে নদীর জলস্তর বেড়ে ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। তৈরি হয় বন্যার পরিস্থিতি। তাতেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ একশো কোটি টাকারও বেশি। ইতিমধ্যেই প্রশাসনের আধিকারিকরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। বর্তমানে নদীর জলস্তর কমতে শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে টানা ত্রাণ শিবির চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে মানুষের সুবিধার্থে চালানো হচ্ছে স্বাস্থ্য শিবিরও। জানা গিয়েছে, ঘাটাল মহকুমা থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। যাঁদের মধ্যে প্রায় এক হাজার ২০০ জনকে ঘাটাল ত্রাণ শিবিরে রাখার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। এছাড়া সাধারণ মানুষের জন্য প্রায় ৩০ হাজার ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতির জন্য দেড় হাজারের বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে ১৩৮টি বাড়ি প্রায় ধুলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, কয়েকশো কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

    সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটা বিষয়ের উপর নজর রাখছেন। এ নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’ জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি বলেন, ‘বর্তমানে জলস্তর কমতে শুরু করেছে। কিন্তু ত্রাণ শিবির চালানো হবে। বহু এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনের আধিকারিকরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন। কেউ আতঙ্কিত হবেন না। প্রশাসন পাশে থাকবে।’ 

    ঘাটালে একটা কথা বেশ চালু হয়ে গিয়েছে—ঘাটালে বাস, জল-যন্ত্রণা তিন মাস। অর্থাৎ, ফি বছরের তিনমাসই জলবন্দি থাকে ঘাটাল। গতবছরও টানা বৃষ্টির জেরে শিলাবতী নদীর জলস্তর বাড়তে শুরু করে। ঘাটাল, দাসপুর, কেশপুর ব্লকের একাধিক এলাকায় হু হু করে জল ঢোকে। তাতে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়। জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল একাধিক গ্রাম , চাষের জমি। অসংখ্য গ্রামের মানুষকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছিল। বেড়েছিল ফসলের ক্ষতির পরিমাণ। শুধু কেশপুর ব্লকে প্রায় দশ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়। সেই কথা মাথায় রেখে দ্রুততার সঙ্গে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের পরিকল্পনা করা হয়। সেই মতো মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মাস্টার প্ল্যানের কাজও শুরু হয়েছে। এবছরও রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। 

    জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ঝুমি, শীলাবতী, কংসাবতী, কেঠিয়া খালের জল দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পায়। এরফলে বর্তমানে ঘাটাল পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এছাড়া খড়ার পুরসভার ৪টি ওয়ার্ড একেবারে জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে। অপরদিকে, ঘাটাল ব্লকের ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও দাসপুর-১ ব্লকের একটি ও চন্দ্রকোণা-১ ব্লকের ২টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় জলমগ্ন হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন বহু সংখ্যক মানুষ। জানা গিয়েছে, ঘাটাল মহকুমায় প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঘাটাল এলাকার বাসিন্দা শ্যামল জানা বলেন, ‘বেশকিছু এলাকায় ত্রাণ কম পৌঁছেছে। তবে, স্বাস্থ্য শিবির ক্রমাগত কাজ করছে। আগামী এক সপ্তাহ বৃষ্টি কম হলে জল নেমে যাবে।’
  • Link to this news (বর্তমান)