• একুশের মঞ্চে বাংলা বিরোধীদের বিসর্জনের ডাক মমতার, এবার ভাষা আন্দোলন
    বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৫
  • দেবাঞ্জন দাস, কলকাতা; ২১’এর পর আবার ২৬। বাংলা দখলের স্বপ্নে ফের বিভোর বিজেপি! তার মধ্যেই পদ্মপার্টির দ্বিচারিতাও ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একদিকে বাংলায় এসে বাঙালির জন্য ‘কেঁদে ভাসানো’, অপরদিকে ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যে জোরকদমে বঙ্গভাষী খেদাও অভিযান। বাংলায় কথা বলা মানেই বাংলাদেশি, অথবা মায়ানমারের রোহিঙ্গা। এমন একটা তকমা সেঁটে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, ওড়িশা এবং অসমের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিতে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত, অপমানিত, অত্যাচারিত হচ্ছেন বঙ্গভাষীরা। এই আবর্তেই গর্জে উঠলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বাংলা ভাষার এহেন অপমান, লাঞ্ছনা, আর অবমাননার বিরুদ্ধে তাঁর হুঙ্কার, এবার হবে ভাষা আন্দোলন। নতুন করে। 

    মমতার কথায়, ‘বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। কিছুতেই মানব না এই অত্যাচার! জীবন দিতে রাজি, কিন্তু বিভেদ মানব না। অনৈক্য মানব না! ভাষা রক্ষার শপথ নিচ্ছি। জীবন দিতে রাজি, কিন্তু বাংলা-বাঙালির গরিমাকে আঘাত করার চেষ্টা কিছুতেই মানব না।’ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর দৃপ্ত ঘোষণা— ‘শুরু হচ্ছে আন্দোলন। বাংলা ভাষা রক্ষার আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন!’ আগামী ২৭ জুলাই এই আন্দোলন শুরু হওয়ার ঘোষণা যখন করলেন মমতা, ধর্মতলার জনসুনামিতে যেন ঢেউ উঠল। সিংহগর্জনে উচ্চারিত হল বাঙালির স্পর্ধা—জয় বাংলা! 

    হাজার চেষ্টাতেও বাংলা যে কখনওই ‘মা কালীর দিব্যি’ ছেড়ে ‘জয় শ্রীরামের দিব্যি’ বলবে না, হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে পদ্মপার্টির বঙ্গ ব্রিগেড। তাই এবার কৌশল বদল! সভার আমন্ত্রণপত্রেই হোক বা সভামঞ্চ, বিজেপির পোস্টার বয় নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে দলবদলুরা পর্যন্ত উদাত্ত কণ্ঠে জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা ধ্বনি উচ্চারণ করছেন। তবে এই ভোলবদল যে বাঙালির মন জয়ের জন্য, তা বুঝেছে আপামর মানুষ। সেই উপলব্ধি থেকেই এদিন মমতা বলেছেন, ‘বন্দেমাতরম বঙ্কিমচন্দ্রের, জাতীয় সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা, আর জয় হিন্দ শিখিয়েছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। সবই তো বাঙালির। বাংলার। সেই বাংলার মানুষের উপর অত্যাচার করবেন, বাংলা ভাষাকে অপমান করবেন, আবার এ রাজ্যে এসে বাঙালি প্রীতি দেখাবেন, তা হয় কীভাবে! আগের থিওরি কাজ করেনি। ভোট আসছে, এখন তাই এ রাজ্যে এসে জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা ধ্বনি দিতে হচ্ছে। টেলিপ্রম্পটার দেখে বাংলা বলে মানুষের মন জয় করা যায় না। মা দুর্গা বাঙালির প্রাণের দেবী। দীঘায় যেমন জগন্নাথ মন্দির করেছি, এবার রাজ্যে হবে দুর্গাঙ্গন।’ বাংলার প্রশাসনিক প্রধানের প্রত্যয়ী বার্তা—‘বাংলা ভাষার উপর অত্যাচার মেনে নেব না। পায়ে পড়লেও না, ক্ষমা চাইলেও নয়। তৃণমূলের শপথ, তৃণমূলের দর্শন— বাংলা বিরোধী বিজেপির বিসর্জন।’ মমতার নিদান—২৬’এ আরও বেশি আসন নিয়ে জিততে হবে। তারপর টার্গেট দিল্লি। ডাবল ইঞ্জিন হটাতে হবে। দেশ বাঁচাতে হবে।  

    এই পর্বেই বঙ্গ বিরোধী গেরুয়া শিবিরকে সতর্কও করে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর কথায়, ‘শান্ত থাকতে দাও, আঘাত কোরো না। টর্নেডো হয়ে যাব, সামলাতে পারবে না। আবার খেলা হবে। এবার বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষার খেলা! বাংলা মাকে রক্ষার খেলা।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)