এ রাজ্যের বাঙালিদের বাংলাদেশি-রোহিঙ্গা তকমা দেওয়ার প্রতিবাদ, বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও হবে: মমতা
বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ভিন রাজ্যে বিশেষ করে বিজেপি শাসিত প্রদেশে বাংলার স্থায়ী নাগরিকদের গায়ে কোথাও ‘বাংলাদেশি’ আবার কোথাও ‘রোহিঙ্গা’ তকমা সেঁটে ‘অনুপ্রবেশকারী’ চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিবাদে গোটা বাংলা সরব হলেও, পদ্মপার্টির বঙ্গ ব্রিগেড উল্টে হেনস্তার সম্মুখীন হওয়া বাংলার সেই সমস্ত নাগরিককে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নিজেদের পছন্দের সমীক্ষা সংস্থাকে দিয়ে ১৭ লাখ ভুয়ো ভোটারের তালিকা তৈরি করে নির্বাচন কমিশনেও জমা দিয়েছে তারা। কে ভুয়ো আর কেই বা প্রকৃত, তা নির্ধারণের আগেই বিজেপি নেতারা আগাম ঘোষণা করছেন—ওই ১৭ লাখ মানুষই বাদ যাবে ভোটার তালিকা থেকে। অনুপ্রবেশকারীর নামে রাজ্যের স্থায়ী নাগরিকদের এহেন হেনস্তার ছকের প্রতিবাদে কড়া অবস্থান নিল তৃণমূল। সোমবার একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিদান—‘কথায় কথায় কালীঘাটে আমার বাড়িতে অভিযান, নবান্নে অভিযান। রাজ্যের মানুষকে অনুপ্রবেশকারীর তকমা সেঁটে দেওয়ার চেষ্টা করছেন যে বা যাঁরা, সেই বিজেপি নেতাদের বাড়ির সামনে বসে যাবেন। ঘেরাও করবেন বাড়ি।’ মমতা বলেন, এতদিন সৌজন্য দেখিয়েছি, আর নয়! ওদের (বিজেপি) থেকে শিখলাম। আমাদের কর্মসূচির দিন পাল্টা প্রোগ্রাম! এবার থেকে ওদের কর্মসূচির দিনই পাল্টা প্রোগ্রাম হবে আমাদের।’
৩৪ বছরের বাম শাসন উৎখাত করার পর্বে মমতার স্লোগান ছিল—বদলা নয়, বদল চাই। দল সুপ্রিমোর সেই নির্দেশ ‘অনিচ্ছা’ সত্ত্বেও মানতে বাধ্য হয়েছে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। এদিন সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মমতা বলেন,‘বদলা নয়, বদল চাই বলেছিলাম। এবার বলছি, বাংলা-বাঙালি বিরোধীরা জব্দ হবে, স্তব্ধ হবে।’ নেত্রীর কথায়, ‘বাংলার লোককে এবার অ্যারেস্ট করে দেখুক, এ লড়াই দিল্লি পর্যন্ত নিয়ে যাব। আমি ধরলে ছাড়ি না। শেষ দেখে ছাড়ব! দেখি আমাকে কীভাবে আটকায়! কত লোককে জেলে পুরবে, জেলে জায়গা দিতে পারবে তো!’ মমতার কথায়, ‘ভোট এলে মতুয়া আর রাজবংশীদের জন্য দরদ। অথচ মহারাষ্ট্রে, অসমে মতুয়া-রাজবংশীদের উপর নির্মম অত্যাচার হচ্ছে। এ রাজ্যের বিজেপি নীরব!’
তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘এ রাজ্যের ২২ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন প্রদেশে কাজ করেন, পরিযায়ী। তাদের নিয়ে এত সমস্যা? কিন্তু এ রাজ্যে ভিন প্রদেশের যে দেড় কোটি মানুষ আছেন, তাঁদের তো কোনও সমস্যা নেই এখানে। আমরা সব ভাষাভাষীর মানুষ বাংলায় মিলেমিশে থাকি। সেই বাংলাকে বিজেপি বদলাতে চাইছে।’ মমতার কটাক্ষ—‘দেখবেন, বাংলাকে বদলাতে গিয়ে, ভারত সরকারের পরিবর্তন হবে না তো!’ দৃশ্যত তৃপ্ত নেত্রী বলেন,‘ জানবেন, ২১’এর মঞ্চ থেকে দিল্লির সরকার উৎখাত প্রক্রিয়ার শিলান্যাস করলাম!’
বাঙালিদের উপর লাগাতার অত্যাচার ও নিপীড়ন বৃদ্ধির প্রতিবাদে একগুচ্ছ আন্দোলন-কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর নির্দেশ, আগামী ২৭ জুলাই থেকে আগামী বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত প্রতি শনি-রবিবার এলাকায় এলাকায় মিছিল করতে হবে। বাঙালি হেনস্তার প্রতিবাদে এরই পাশাপাশি ময়দানে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধর্ণা কর্মসূচি পালিত হবে। তাতে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক জগতের লোকজন, বুদ্ধিজীবী মহল, ছাত্র-যুব, মহিলা, শ্রমিক-কৃষকরা অংশ নেবেন।’ এই পর্বেই মমতার দীপ্ত বার্তা—‘বাংলা ভাঙবে, তবু মচকাবে না। কবির ভাষায়, বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি, বুঝে নিক দুর্বত্ত।’