• বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সক্রিয় করার গেরুয়া ছক ভেস্তে দিলেন তৃণমূল নেত্রী, ২১ জুলাইয়ের ভাষণে বঞ্চনা নিয়ে তোপ মমতার
    বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৫
  • প্রীতেশ বসু, কলকাতা: সাধারণত নির্বাচনের সময়েই রাজ্যে দেখা মেলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর। এছাড়া আপৎকালীন কোনও পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্যের প্রয়োজনে আসে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা সামাল দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ রাজ্যের। সেই ক্ষেত্রে এই কাজের প্রাথমিক দায়িত্ব রাজ্য পুলিসের। তবে সাংবিধানিক সমস্ত রীতি-নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের অন্দরে হস্তক্ষেপের নয়াদিল্লির ছক সর্বসমক্ষে নিয়ে এলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় তুলে ধরলেন কেন্দ্রের পাঠানো বিজ্ঞপ্তি। এর মাধ্যমে তিনি খোলসা করলেন অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে রেখে কীভাবে রাজ্যকে এড়িয়ে সরাসরি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের অধিকার খর্ব করতে চাইছে মোদি-শাহের গেরুয়া শিবির।   

    ধর্মতলায় শহিদতর্পণের মঞ্চ থেকে মমতা দেখালেন কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্র মন্ত্রকের পাঠানো ‘প্রসিডিওর ফর ডিপোর্টেশন অব ইললিগাল বাংলাদেশি 

    অ্যান্ড মায়ানমার ন্যাশনাল’ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি। এরপর তিনি বলেন, ‘১১ জুলাই রাজ্যেকে পাঠানো 

    চিঠিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নোডাল অফিসারদের তথ্য দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের আধিকারিকদের বলা হয়েছে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।’ 

    কিন্তু রাজ্যের কাজে কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন? এই প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, ‘কেন্দ্রের এই চক্রান্ত এখানে কার্যকর হবে না। 

    এখানে সেন্ট্রাল ফোর্স নয়, রাজ্যের ফোর্সই  (রাজ্য পুলিস) কাজ করবে। এরাজ্যের কথা না ভেবে ওঁদের উচিত পহেলগাঁও, কাশ্মীর এবং সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে মাথা ঘামানো।’   

    প্রায় একমাস ধরে মমতার গলায় আরও একটি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তির কথা শোনা যাচ্ছিল। তাঁর অভিযোগ, ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিকে পাঠানো এই বিজ্ঞপ্তিগুলিকে ঢাল করেই ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষের উপর অত্যাচার চলছে। সেই বিজ্ঞপ্তিও এদিন প্রকাশ্যে আনেন তিনি। 

    কী আছে এই বিজ্ঞপ্তিতে? মমতা বলেন, ‘এই বিজ্ঞপ্তিতে রাজ্যগুলিকে ডিটেনশন ক্যাম্পের মতো পর্যাপ্ত হোল্ডিং ক্যাম্প তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তির উপর সন্দেহ হলেই তাঁকে একমাসের জন্য জেলে আটকে রাখা যাবে। কেন্দ্রের এই নির্দেশের পরই অন্তত এক হাজারের বেশি মানুষকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে! আবার রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং ওড়িশার মতো রাজ্যের জেলেও পাঠানো হয়েছে কিছু মানুষকে।’ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন করে বিহারে প্রায় ৪০ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।’ বাংলার নেত্রীর সাফ হুঁশিয়ারি, ‘এখানে এসব বরদাস্ত করা হবে না। একজনেরও নাম বাদ পড়লে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও হবে।’ 

    রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘বাংলার ন্যায্য প্রাপ্য ১ লক্ষ ৭২ হাজার কোটি টাকা মোদি সরকার মেটাচ্ছে না।’ এইভাবে বাংলাকে ভাতে মারার চক্রান্ত চলছে বলেও এদিন গর্জে ওঠেন ‘অগ্নিকন্যা’। তিনি মনে করেন, ‘বাংলার ১০০ দিনের কাজ এবং আবাস প্রকল্পের মতো গরিব মানুষের প্রাপ্য টাকা আটকে রাখা হয়েছে স্রেফ সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক কারণে।’ তিনি জানান, তবে এরাজ্যের মানুষের কথা মাথায় রেখেই মা-মাটি-মানুষের সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, সবুজসাথী সহ ৯৪টি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, এছাড়া বাংলার দু’কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার উপরে তুলে আনা হয়েছে। এই সমস্ত প্রকল্পের যাবতীয় লিখিত তথ্য সাধারণ মানুষও পাবেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)