নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও সংবাদদাতা, কল্যাণী: দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের মতোই আগামী দিনে রাজ্যে তৈরি হবে ‘দুর্গাঙ্গন’। সোমবার ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকে এই কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ, রাজ্যে আরও একটি বিশাল মন্দির তৈরি হওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
নির্বাচন আসতেই বিজেপি ধর্মের অস্ত্রে শান দিতে শুরু করেছে বলে এদিনের সভা থেকে তোপ দেগেছেন মমতা। বিজেপি’র নেতা-কর্মীরা সাধারণত ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে অভ্যস্ত। তবে দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যের পর দুর্গা ও কালীর নাম নিয়ে প্রচরে নেমেছিল গেরুয়া শিবির। প্রধানমন্ত্রী সেখানে বক্তৃতার শুরুতে বলেছিলেন, ‘বড়রা আমার প্রণাম নেবেন, ছোটরা ভালোবাসা। জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা। বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের জন্য বড় স্বপ্ন দেখেছে। বিজেপি এক সমৃদ্ধ পশ্চিমবঙ্গ বানাতে চায়।’ তিনদিন আগের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে এদিন তৃণমূল সুপ্রিমোর কটাক্ষ, ‘একমাত্র ভোটের সময় কি আপনাদের মা কালী- মা দুর্গার কথা মনে পড়ে?’ তাঁর দাবি, সামনেই ভোট। তাই বিজেপি আরও বেশি করে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে। এই আবহে রাজ্যে ‘দুর্গাঙ্গন’ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বাংলার দুর্গাপুজোকে নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিতে ৪৩ হাজারের বেশি পুজো কমিটিকে আর্থিক অনুদান দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্যান্ডেলের প্রতিমা সংরক্ষণের পদক্ষেপ করেছে মমতার সরকার। তাছাড়া, কলকাতার দুর্গাপুজোর ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রাজ্য সরকার।
এদিন তৃণমূল সমর্থকদের বিভিন্ন মিছিল থেকে শুরু করে সভাস্থলে অনেককে দেখা গিয়েছে জগদন্নাথদেবের বিগ্রহ সঙ্গে নিয়ে আসতে। দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের রেপ্লিকা হাতে নিয়ে ‘জয় জগন্নাথ’ ধ্বনি দিতে দিতে পথ হাঁটতে দেখা গিয়েছে অনেককে। কোলে মহাপ্রভুকে নিয়ে সভায় এসেছিলেন চাকদহ পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল মৌমিতা ভট্টাচার্য। শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছে বিগ্রহ কোলে নিয়েই হেঁটে ধর্মতলায় মঞ্চের কাছে পৌঁছন তিনি। লক্ষণীয় হল, তাঁর সঙ্গে আসা তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের হাতে তৃণমূলের পতাকা ছিল না। তাঁদের কোনও রাজনৈতিক স্লোগান দিতেও শোনা যায়নি। তাঁদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে ছিল জগন্নাথদেবের মুখ। স্লোগান ছিল একটাই— জয় বাংলা, জয় জগন্নাথ। কলকাতা পুরসভার ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূলের তরফে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের একটি রেপ্লিকা আনা হয় সভাস্থলে। এটির উচ্চতা প্রায় চার ফুট, লম্বা প্রায় দশ ফুট। ডোরিনা ক্রসিং, মেট্রো চ্যানেল সহ ধর্মতলা চত্বরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানো হয় সেই রেপ্লিকা। মন্দিরের সেই রেপ্লিকার সামনে চলে ছবি তোলার হুড়োহুড়ি।