এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে পুলিশের লোহার গার্ডরেলে মাথা ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে সমানে কাতরে চলেছেন মধ্যবয়সি। যন্ত্রণায় ক্রমশ কুঁকড়ে যাওয়া রোগীকে দাঁড় করিয়ে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছেন সঙ্গী বৃদ্ধা। তাঁরও চোখে-মুখে উৎকণ্ঠার ছাপ! অসুস্থ মধ্যবয়সিকে সামলাতে সামলাতেই বৃদ্ধাকে নিরাপত্তারক্ষীদের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা গেল, ‘‘মিছিলের জন্য রাস্তায় পর পর গাড়ি থমকে। মাঝ রাস্তায় বাস থেকে নামিয়ে হাঁটিয়ে হাসপাতালে আনতে বাধ্য হয়েছি। ও আর পারছে না। দেখুন না, যদি তাড়াতাড়ি ভর্তি করে নেওয়া যায়।’’
মিছিলের ফাঁসে আটকে রোগীদের ভোগান্তির আশঙ্কা যে ছিল না, তা নয়। তেমন পরিস্থিতি আঁচ করে রাখা হয়েছিল পুলিশি বন্দোবস্তও। তার পরেও এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালমুখী রোগীদের ভোগান্তি আটকানো গেল না। মিছিলের ফাঁসে দীর্ঘক্ষণ আটকে কেউ গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই যেতে বাধ্য হলেন। কেউ আবার রোগীকে নিয়ে যেতে সাহায্য নিলেন ভ্যানরিকশার। ছুটি পাওয়া রোগীদের নিয়েও ভোগান্তির শেষ ছিল না। মিছিলের কারণে যানজটের ভয়ে রাস্তায় নামতে নারাজ অ্যাম্বুল্যান্স চালককে রাজি করাতে হল প্রায় দ্বিগুণ টাকা দিয়ে।
যদিও সোমবার সকালের দিকে ছিল ভিন্ন ছবি। এন আর এস হাসপাতালে আসা রোগীদের সাহায্য করতে পুলিশের বাড়তি তৎপরতা নজরে এসেছিল। কিন্তু বেলা বাড়তেই জটিল হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। জেলা ও শহরতলির একের পর এক ট্রেন শিয়ালদহ স্টেশনে এসে থেমেছে, আর ধর্মতলামুখী ভিড় এসে পড়েছে এ জে সি বসু রোডে। বেলা বাড়তেই জেলা থেকে শহরমুখী গাড়ির চাপও এসে পড়ে মৌলালি সংলগ্ন রাস্তায়। সকাল দশটার পর থেকে মূলত এ দিন চাপ বাড়ে। গাড়ি ও মিছিলের ফাঁসে অবরুদ্ধ হয়ে যায় মৌলালি থেকে শিয়ালদহমুখী রাস্তা। বৃদ্ধা মাকে নিয়ে কার্যত দৌড়তে দৌড়তে বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে এসেছিলেন মহম্মদ আজাদ। বহির্বিভাগের দিকে যাওয়ার পথে আজাদ বললেন, ‘‘দু’ঘণ্টা আগে ঢোকার কথা, আর এখন ঢুকছি। জানি না, টিকিট দেবে কিনা।’’ একই কথা শোনালেন পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে বসিরহাট থেকে আসা শঙ্কর মণ্ডলও।
এই হাসপাতালেই দিনকয়েক ভর্তি থাকার পরে এ দিন ছুটি পেয়েছেন ক্যানিংয়ের বাসিন্দা প্রৌঢ়। যদিও বাবাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার অ্যাম্বুল্যান্স খুঁজতে গিয়ে কালঘাম ছুটেছে ছেলের। ছেলের কথায়, ‘‘আসার দিন ২০০০ টাকায় বাবাকে নিয়ে এসেছিলাম। যাওয়ার জন্য ৩৭০০ টাকায় অবশেষে রাজি করিয়েছি। অ্যাম্বুল্যান্স পেলেও যা অবস্থা, বাড়ি ফিরতে না সন্ধ্যা হয়ে যায়!’’
এন আর এসের সামনের রাস্তা দিয়ে এক রোগীকে ভ্যানরিকশায় চাপিয়ে পিছনে কয়েক জন ঠেলতে ঠেলতে ছুটছিলেন। ভিড় কাটিয়ে দ্রুত এগিয়ে যেতে চাওয়া রোগীর সঙ্গীদের এক জন শুধু বললেন, ‘‘দেখছেন তো ভিড় ঠেলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হচ্ছে। রোগী আগে বাঁচুন।’’