• নারী-সুরক্ষা থেকে নিকাশি, ‘দিদি’র ভাতায় বিলীন জরুরি বহু প্রশ্ন
    আনন্দবাজার | ২২ জুলাই ২০২৫
  • বৃষ্টি হলেই বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটুজল। সপ্তাহ গড়ালেও তা নামে না। বার বার বলেও কাজ তেমন কিছু হয়নি। কিন্তু তা-ও তাঁদের কাছে ‘দিদি’র বিকল্প নেই। সোমবার সকালে ধর্মতলার সভামঞ্চের অদূরে বাজনায় বোল তোলার ফাঁকে এমনই দাবি করলেন বাজনদার এক যুবক।

    কিন্তু স্থানীয় স্তরে এমন সমস্যা থাকলেও, কেন তৃণমূল সরকারের উপরেই ভরসা করছেন তাঁরা? সামান্য সময়ের জন্য বাজনা থামিয়ে কপালের ঘাম মোছার ফাঁকে বাঁকুড়ার উত্তম কালিন্দী, রবি কালিন্দীরা বললেন, ‘‘দিদির জন্যই প্রতি মাসে অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকছে।’’ কিসের টাকা? কেঞ্জাকুড়া গ্রামের ওই দুই বাজনদারের সটান উত্তর, ‘‘লোকশিল্পীদের মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা দিচ্ছে সরকার। তা হলে তো দলের সঙ্গে থাকতেই হবে।’’

    এ দিন সমাবেশ চত্বরে আসা লোকজন, বিশেষত মহিলারা, বার বারই বার্ধক্য ভাতা, লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ বিভিন্ন আর্থিক সুবিধার কথা বলছিলেন। যা প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিচ্ছিল, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেওয়া ভাতাই এ বারেও জোড়া ফুলের ভোট বৈতরণী পার করার একটি বড় হাতিয়ার। কিন্তু রাজ্যে আর জি কর-সহ মহিলাদের প্রতি অন্যায়ের একের পর এক ঘটনা তো ঘটছে। সেখানে কি মাসিক ভাতাই বড় হল?

    ‘‘কেন হবে না?’’— প্রশ্ন তুললেন পুরুলিয়ার পুঞ্চার মীরা কর্মকার। সমাবেশে যোগ দিতে সঙ্গে এসেছেন তাঁর বৌমাও। দু’জনেই এক যোগে দাবি করলেন, ‘‘স্বামী বা ছেলের কাছে তো কথায় কথায় হাত পাততে হচ্ছে না। বাড়িতে কিছু দরকার হলে নিজেরাই কিনতে পারছি।’’ আর তরুণী বধূর কথায়, ‘‘পরিবারের তিন-চার জন মহিলা প্রতি মাসে নির্দিষ্ট একটা টাকা পাচ্ছেন। এটা কম কিসের?’’ ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ের যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ওঁরা কথা বলছিলেন, গত বছর সেখানেই আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে চলেছিল অনশন-আন্দোলন। সেই প্রসঙ্গ তুলতেই আনন্দ কর্মকারের দাবি, ‘‘আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে আমিও রাস্তায় নেমেছিলাম। কিন্তু পরে বুঝেছি, ওটা নিয়ে রাজনীতি করছে বিরোধীরা।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘সিবিআই-ও তো যেটা করল, তাতে দেখা গেল, কলকাতা পুলিশ ঠিকই কাজ করেছিল।’’

    তৃণমূল সরকারের দেয় ভাতা প্রকারান্তরে বাজার-অর্থনীতিরও উন্নতি করছে বলে দাবি করে আরামবাগের রাজেশ ঠাকুর বললেন, ‘‘মহিলারা যে টাকা পাচ্ছেন, তা দিয়ে বাজার থেকে জিনিস কিনছেন। তাতে আরও এক জনের রোজগার হচ্ছে। এটা কম কথা নাকি?’’ একই সুর বর্ধমানের পিউ সরকারের গলাতেও। বললেন, ‘‘বাংলা ভাষা বললেই বিজেপি জেলে ভরছে। আর দিদি সারা ক্ষণ চিন্তা করছেন, প্রতিটিঘরের মা-বোনেরা কী ভাবে স্বাবলম্বী হবেন।’’

    বেশি রোজগারের জন্য চেন্নাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন বাঁকুড়ার মিঠু মণ্ডল। সমাবেশের জন্য এসেছেন বাড়িতে। এ দিন ছেলেকে নিয়ে ধর্মতলা চত্বরে দাঁড়িয়ে ওই যুবক বললেন, ‘‘অনেক সময়ে টাকা পাঠাতে দেরি হলেও চিন্তা নেই। মা ও বৌ লক্ষ্মীর ভান্ডারের যে টাকা পায়, তা দিয়ে ওরা ঠিক চালিয়ে নিতে পারে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)