• বাংলার থেকে বেশি ভুয়ো জব কার্ড  উত্তরপ্রদেশ-গুজরাটের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যে, তৃণমূল সাংসদের প্রশ্ন, ‘এ বার কী বলবে?’
    এই সময় | ২২ জুলাই ২০২৫
  • অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়

    টানা তিন বছর রাজ্যে বন্ধ ১০০ দিনের কাজ। দীর্ঘ টালবাহানার পরে আগামী অগস্ট মাস থেকে রাজ্যে পুনরায় একশো দিনের কাজ চালু করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। একশো দিনের কাজ বন্ধ করা নিয়ে সরব বাংলার শাসকদল তৃণমূল। কিন্তু এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা কেন্দ্রীয় সরকার আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, রাজ্যকে দেওয়া কেন্দ্রের ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে বিস্তর দুর্নীতি হয়েছে। প্রকৃত সুবিধাভোগীদের (উপভোক্তা) বঞ্চিত করে ওই টাকা অন্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। এই যুক্তিতেই এ রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দ টাকা আটকে রেখেছিল কেন্দ্র। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেও তৃণমূলের অন্যতম অ্যাজেন্ডাই ছিল, গরিব মানুষের টাকা আটকে রাখা।

    কিন্তু মঙ্গলবার বাদল অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে তৃণমূল সাংসদ মালা রায়ের লিখিত প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে, তাতে স্পষ্ট, অনিয়ম হয়েছে বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যেও।

    গত তিন বছরে বিভিন্ন রাজ্যে যে সংখ্যক ভুয়ো কার্ড পাওয়া গিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, অনেক রাজ্যের থেকে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা অনেকটাই ‘ভালো’। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ -২৩ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গে ফেক কার্ডের জন্য জব কার্ডের তালিকা থেকে বাদ গিয়েছেন ৫,২৬৩ জন উপভোক্তা। ২৩-২৪-এ সেই সংখ্যা ৭১৯, ২৪-২৫ অর্থবর্ষে সেই সংখ্যা ২।

    কেন্দ্রীয় গ্রামীণ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী কমলেশ পাসওয়ান মালা রায়ের প্রশ্নের উত্তরে এ ব্যাপারে রাজ্যের উপরেই দায়ভার চাপিয়েছেন। লিখিত উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, মনরেগা প্রকল্প মূলত রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। এই প্রকল্প যাতে ঠিক ভাবে চলে, সে জন্য আইন, নির্দেশিকা ও Annual Master Circular বেশ কিছু নিয়ম-কানুন ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।

    যদি কোথাও এই প্রকল্পে অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, যেমন ভুয়া জব কার্ড তৈরি বা অন্য কোনও বেআইনি কাজের, তা হলে প্রাথমিক দায় বর্তায় রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সরকারের। তারা তদন্ত করতে পারে এবং প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেবে।

    প্রকল্প বন্ধের কোনও পরিকল্পনা নেই

    শিবরাজ সিং চৌহান, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী

    পরে এ বিষয়ে মালা রায় বলেন, ‘বাংলা এবং বাঙালিবিদ্বেষী বিজেপি এ বার কী বলবে ? বিজেপি শাসিত রাজ্যে লাখ লাখ ভুয়ো মনরেগা জব কার্ড পাওয়া যাচ্ছে কেন? দীর্ঘদিন ধরে বাংলার সঙ্গে বঞ্চনা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ মনরেগা, আবাস যোজনা, সড়ক যোজনায় বাংলার ন্যায্য পাওনা কোটি কোটি টাকা বকেয়া রেখে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর তোয়াক্কা না করেই৷ সেই আবহেই বিজেপি শাসিত রাজ্যে মনরেগা জব কার্ডের দুর্নীতির এই ছবি গেরুয়া শিবিরের আসল চেহারাই তুলে ধরছে৷’

    কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে স্পষ্ট করেছেন, ‘প্রকল্প বন্ধ বা কমানোর কোনও প্রস্তাব নেই। মনরেগা প্রকল্প বন্ধ বা সীমিত করার কোনও প্রস্তাব নেই।’

    কোর্টের নির্দেশে কবে থেকে রাজ্যে একশো দিনের কাজ শুরু হবে সে ব্যাপারে কেন্দ্রকে প্রশ্ন করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং সাজদা আহমেদ। এই প্রশ্নেরও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।

  • Link to this news (এই সময়)