একুশের কৌশল ছাব্বিশেও! ভোটের আগে নয়া সরকারি প্রকল্পের ঘোষণা মমতার, কী হবে?
হিন্দুস্তান টাইমস | ২২ জুলাই ২০২৫
একুশের স্ট্র্যাটজি ছাব্বিশেও - ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যেরকমভাবে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি চালু করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস সরকার, সেরকমভাবেই ২০২৬ সালের ভোটের আগে নয়া কর্মসূচির ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নবান্ন থেকে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন এলাকায় ছোট-ছোট সমস্যার সমাধান করার জন্য সেই কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে। বুথ ধরে-ধরে সেই কাজ শেষ করা হবে দু'মাসের মধ্যে। আর আগামী ২ অগস্ট থেকে সেই কর্মসূচির সূচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, গ্রামের ছোট-ছোট সমস্যাগুলি শুনবেন সরকারি আধিকারিকরা। তিনটি করে বুথ নিয়ে একটি কেন্দ্র তৈরি করা হবে। মোট ৮০,০০০ বুথ আছে। সেরকমভাবেই তিনটি বুথ নিয়ে একদিন করে শিবির তৈরি হবে। নির্দিষ্ট কেন্দ্রে এসে মানুষরা নিজেদের সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। তারপর আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক করা হবে যে কতটা কাজ করা যাবে। পুরো কর্মসূচির জন্য দু'মাসের মতো লাগবে।
কী কারণে সেই নয়া কর্মসূচি শুরু করা হচ্ছে, সেটাও ব্যাখ্যা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, অনেক সময় দেখা যায় যে কোনও ছোট পাড়ায় হয়তো একটি কলের দরকার আছেন। একটি ছোট্ট পাড়ায় ছোট্ট গ্রামীণ রাস্তা পাকা করে দিলে কাদার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে হয় না মানুষকে। আবার কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি বসাতে হবে বা কোথাও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ছাদ ঠিক করে দিতে হবে বা স্কুলের ছাদ ঠিক করে দিতে হবে। সেইসব ছোট-ছোট কাজের জন্যই ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে।
মমতা জানিয়েছেন, ছোট সমস্যা সমাধান করে দিলেও খুশি হন মানুষ। তাঁদের কথা শুনলে খুশি হন। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে ‘গ্রামের অন্দরে, মাটির অন্দরে’ গিয়ে ছোট-ছোট সমস্যার সমাধান করা হবে। যেগুলি হয়তো গ্রাম পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ করে ওঠার সুযোগ পায় না। সেগুলির সমাধান করা হবে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির মাধ্যমে। যে কর্মসূচির উদ্দেশ্য হল - ‘উপর থেকে নয়, নীচ থেকে মানুষের কথা শোনা’।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ছোট-ছোট বিষয়ের সমাধানের জন্য চালু করা হলেও আদতে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির বিস্তৃতি অত্যন্ত বেশি হবে। প্রতিটি বুথের জন্য বরাদ্দ করা হবে ১০ লাখ টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘কাউকে সরকারের কাছে পৌঁছাতে হবে না। সরকার তাঁদের দরজায় পৌঁছে যাবে।’
সেই কর্মসূচির রূপায়ণের জন্য রাজ্য স্তরে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হচ্ছে। সেটির মাথায় থাকবেন মুখ্যসচিব। তাছাড়া অর্থসচিব এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের সচিবরাও থাকবেন। আর জেলাস্তরে টাস্ক ফোর্স তৈরি করে দেবেন মুখ্যসচিব। বড় প্রকল্পের যেমন চলছে, সেরকমভাবেই চলবে। সেইসঙ্গে পুরোপুরি স্বচ্ছতা বজায় রেখে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে।
আর মমতা সরকার যে সেই কর্মসূচির সূচনা করল, সেটার নেপথ্যে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন আছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে-আগে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি চালু করার ফল পেয়েছিল মমতা সরকার। সেই ধারা বজায় রেখেই ভোটের আগে মানুষের দুয়ারে আরও একবার পৌঁছে যাওয়ার কৌশল নেওয়া হল।