নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: প্রেমের টানে কেউ সিংহাসন ছেড়ে পথের পথিক হয়েছেন, কেউবা আপন করে নিয়েছেন পৃথিবীর সব দুঃখ-গাথা। সোমবার রাতে অসম প্রেম নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠল ভূপতিনগর থানার গড়বাড়ি গ্রাম। প্রেমিক ২৮ বছরের অবিবাহিত যুবক। তাঁর প্রেমে মজে বছর ৩৫-এর এক গৃহবধূ নিজের ক্লাস সেভেনে পড়া মেয়েকে নিয়ে সটান হাজির হন যুবকের বাড়ি। নিজের ব্যবহৃত পোশাক, গয়না সবকিছু ব্যাগ ও ট্রাঙ্কে নিয়ে মেয়ের হাত ধরে প্রেমিকের বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিলেন। প্রেমিক যুবকও নিজের ভালোবাসাকে মর্যাদা দিয়ে জীবনের নতুন ইনিংস শুরুর পরিকল্পনা নেন। কিন্তু, এই সম্পর্কের মাঝে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান ওই যুবকের বাড়ির লোকজন ও গ্রামের মোড়ল-মাতব্বররা। রাতে ওই গৃহবধূ ও তাঁর প্রেমিককে গাছে বেঁধে বেদম মারধর করা হয়। মারের হাত থেকে রেহাই পায়নি গৃহবধূর ১৩বছরের মেয়েটিও। সোমবার রাত ১১টা নাগাদ ওই খবর পেয়ে ভূপতিনগর থানার পুলিস ছুটে যায় গড়বাড়ি গ্রামে। মা-মেয়ে এবং ওই যুবককে উদ্ধার করে থানায় আনে।
জানা গিয়েছে, ওই বধূর বাপের বাড়ি চণ্ডীপুর থানার হবিচক গ্রামে। মাত্র ১৪বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল। তাঁর ১৯বছরের একটি ছেলে ও ১৩বছরের মেয়ে রয়েছে। ছেলে কেরলে কাজ করে। গড়বাড়ি গ্রামেই ওই বধূর বোনের বাড়ি। সেখানে আসা-যাওয়ার সুবাদে ৩৫বছরের ওই বধূর সঙ্গে ২৮বছরের যুবকের আলাপ হয়। ওই যুবক কলকাতায় একটি সংস্থায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। দু’জনের মধ্যে ফোনে প্রেমালাপ চলত। স্বামীর সংসার একদম ভালো লাগছে না বলে জানাতেন বধূ। তাই দু’জনে বিয়ে করে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
সোমবার ওই বধূ ব্যাগ, ট্রাঙ্ক গুছিয়ে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে হবিচক থেকে সোজা গড়বাড়ি পৌঁছে যান। সেখানে প্রেমিকের সঙ্গে সাক্ষাতের পর একটু রাত বাড়তেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। তিনজন গড়বাড়ি গ্রামে ওই যুবকের বাড়ি পৌঁছনো মাত্র সেই খবর চাউড় হয়ে যায় পাড়ায়। কাতারে কাতারে লোক জড়ো হয়। এরপর দু’জনকে গালমন্দ করার পর শুরু হয় মারধর। গাছে বেঁধে তাঁদের মারধর চলে। ক্লাস সেভেনে পড়া মেয়েটিকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার কথা থানায় পৌঁছতেই পুলিস গিয়ে তিনজনকে উদ্ধার করে। রাতে ভূপতিনগর থানার পুলিস ওই বধূর বাবা এবং স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই রাতে তাঁর বাবা থানায় হাজির হন। অনেক রাতে মুচলেকা দিয়ে মেয়ে এবং নাতনিকে বাড়ি নিয়ে যান। তিনি স্বেচ্ছায় স্বামীকে ছেড়ে ওই যুবকের বাড়ি এসেছিলেন এবং ভবিষ্যতে স্বামীর সঙ্গেই সংসার করবেন বলে মুচলেকা দেন ওই বধূও।
মঙ্গলবার সকালেও ভূপতিনগর থানায় প্রেমিক যুবক ছিলেন। তিনি বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে আমাদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। পরস্পরকে ভালোবেসে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু, বাড়িতে এভাবে মা-মেয়েকে মার খেতে হবে ভাবিনি। মেয়েটিকেও মারধর করায় আমার খুব কষ্ট হয়েছে। ভূপতিনগর থানার ওসি শেখ মহম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, গড়বাড়ি গ্রামে ঝামেলার খবর পেয়ে পুলিস গিয়েছিল। তারপর তিনজনকে থানায় আনা হয়। মুচলেকা দিয়ে প্রত্যেককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।