আবাস ও একশো দিনের কাজে বাংলাকে বঞ্চনা, ক্ষুব্ধ ভোক্তাদের নানা প্রশ্নে অস্বস্তি পরিদর্শন এড়াল কেন্দ্রীয় দল
বর্তমান | ২৩ জুলাই ২০২৫
শ্রীকান্ত পড়্যা, তমলুক: একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বঞ্চনার মধ্যেই সোমবার ন্যাশনাল লেভেল মনিটরিং (এনএলএম) টিম সোমবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় পা রাখে। মঙ্গলবার পরিদর্শনের প্রথম দিনেই তমলুক ব্লকের বিজেপি পরিচালিত উত্তর সোনামুই পঞ্চায়েত অফিসে বসে উপভোক্তাদের ক্ষোভ টের পেলেন টিমের সদস্যরা। একশো দিনের কাজ বন্ধ কেন? আবাসের টাকা কোথায়? আজকের দিনে বার্ধক্য ও বিধবা ভাতায় হাজার টাকা পেনশন কি যথেষ্ঠ? উপভোক্তাদের কাছ থেকে এধরনের চোখা চোখা প্রশ্নে অস্বস্তির মধ্যে পড়েন টিমের সদস্যদের। বিজেপির গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, একাধিক মহিলা সদস্য এবং পঞ্চায়েতের কর্মীরা একযোগে উপভোক্তাদের শান্ত করার মরিয়া চেষ্টা করেন। কিন্তু, কেন্দ্রীয় টিমকে হাতের কাছে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন উপভোক্তারা। যেকারণে ওই টিম পঞ্চায়েত অফিসে বসেই উপভোক্তাদের বয়ান নথিভুক্ত করলেন। আর এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার ঝুঁকি নেননি।
১০০ দিনের কাজ করা এদিন পাঁচজন উপভোক্তাকে ডাকা হয়েছিল। উত্তর সোনামুই গ্রাম পঞ্চায়েতের গণপতিনগর থেকে জবকার্ড হোল্ডার স্বাগতা দিণ্ডা, যশোদা দিণ্ডা, প্রতিমা দিণ্ডা প্রমুখ এসেছিলেন। তাঁরা মূলত জেলা প্রশাসনিক ভবন এবং ডিএম বাংলোয় ঘাস কাটার কাজ করেন। এনআরইজিএ প্রকল্পে কাজ করেও তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পারিশ্রমিক পাননি। রাজ্য সরকার সেই টাকা দিয়েছে। এদিন এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সকলেই। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনারও পাঁচজন উপভোক্তাকে ডাকা হয়েছিল। সেই তালিকায় সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ লক্ষ্মণচন্দ্র ধাড়া ছিলেন। তিনি সরাসরি কেন্দ্রীয় টিমের সদস্যদের মুখের উপর বলেন, ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় আজকের দিনে পাকা বাড়ি বানানো কি সম্ভব? আরও এক ধাপ এগিয়ে আবাস উপভোক্তা মেনকা ধাড়া বলেন, বাড়ি বানানোর জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। তারমধ্যে ১০ হাজার টাকা ‘কাটমানি’ দিতে হয়েছে। ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকায় কোনওভাবেই পাকা বাড়ি করা সম্ভব নয়। বাধ্য হয়ে নিজেদের জমানো টাকা এবং ব্যাঙ্ক থেকে আরও এক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ি করেছি।কেন্দ্রীয় টিম যাতে কোনওভাবে অসুবিধায় না পড়ে সেজন্য সবরকম উদ্যোগ নিয়েছিল বিজেপির পঞ্চায়েত। গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মী নন্দন সামন্তকে আবাস উপভোক্তা হিসেবে ওই টিমের কাছে হাজির করানো হয়। বিজেপি ঘনিষ্ঠ মাদার টেরেসা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পাঁচ সদস্যাকেও গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে কেন্দ্রীয় টিমের সামনে হাজির করানো হয়। যদিও সেই গোষ্ঠীর খাতাপত্র একেবারেই ঠিক নেই। গোষ্ঠীর সদস্যাদের হাতের কাজের কোনও প্রশিক্ষণও নেই। ওই গোষ্ঠীর খাতা ও তাদের কাজকর্ম নিয়ে রীতিমতো বিস্ময়প্রকাশ করে টিম।
বিধবাভাতা ও বার্ধক্য ভাতা প্রকল্পের উপভোক্তা হিসেবে আশালতা মাইতি, সুচিত্রা অধিকারী, বঙ্কিম অধিকারী, নির্মলা বেরাদের আনা হয়েছিল। তাঁরা বলেন, ‘আজকের দিনে মাসিক এক হাজার টাকা ভাতায় সংসার চলে না। বয়স বাড়লে শরীরে নানারকম রোগব্যাধি বাসা বেঁধেছে। ওষুধ কিনতেই ফতুর হয়ে যাচ্ছি।’ পাল্টা, ন্যাশনাল লেভেল মনিটরিং টিমের এক সদস্য বলেন, ‘আপনাদের মাসিক কত টাকা দিলে সুবিধা হবে?’ বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্যা মৌমিতা সাউ ঘোষ বয়স্ক উপভোক্তাদের কানের কাছে ফিস ফিস করে জানান, ‘পাঁচ হাজার টাকা বলুন।’ তাঁর কথা শুনে আশালতাদেবীরা বলেন, ‘অন্তত পাঁচ হাজার টাকা দরকার।’পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের এক অফিসার বলেন, পেনশন স্কিমে এখন ৬০ হাজারের বেশি নাম বাছাই হলেও ওয়েটিং লিস্টে রয়েছে। তাঁদের ভাতা চালু হওয়াটা অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। উত্তর সোনামুই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বিজেপির পূর্ণেন্দু পাল বলেন, এদিন টিম এসেছিল। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে পাঁচজন করে উপভোক্তার সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। উপভোক্তারা নিজেদের সুবিধা, অসুবিধার কথা বলেছেন। তমলুক পঞ্চায়েত সমিতির সোনামুই পঞ্চায়েতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। নিজস্ব চিত্র