• আলিপুর চিড়িয়াখানায় ৩০ বছর ধরে প্রাণীসংখ্যার রিপোর্টে গরমিল
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৪ জুলাই ২০২৫
  • কলকাতার দেড়শো বছরের পুরোনো আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে আশ্চর্য উপায়ে প্রাণী উধাও হয়ে যাচ্ছে। এই চিড়িয়াখানার প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগ করে ‘স্বজন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছে। এই সংস্থা দাবি করেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে চিড়িয়াখানায় ৬৭২টি প্রাণী ছিল। কিন্তু তার পরের দিনই ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথমে দেখা যাচ্ছে প্রাণীর সংখ্যা নেমে এসেছে ৩৫১-তে। এক রাতের মধ্যেই উধাও হয়ে গিয়েছে ৩২১টি প্রাণী। কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের (সিজেডএ) তরফ থেকে আসা বার্ষিক রিপোর্ট থেকে এই গরমিল ধরা পড়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে দাবি করেছে যে, এতখানি তথ্যবিকৃতির ঘটনা একেবারে নজিরবিহীন এবং গত ৩০ বছর ধরে এরকমই চলে আসছে।

    একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ১৯৯৫-৯৬ অর্থবর্ষ থেকে শুরু করে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষ পর্যন্ত প্রতি বছরই আলিপুর চিড়িয়াখানার বার্ষিক রিপোর্টে প্রাণীসংখ্যার গণ্ডগোল দেখা গিয়েছে। স্পষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই বছরে বছরে বদলে গিয়েছে প্রাণীদের সংখ্যা। ‘অ্যানিমাল প্রোটেকশন ইন্ডিয়া’র ওয়াইল্ডলাইফ রিসার্চ ম্যানেজার শুভব্রত ঘোষ বলেছেন, এরকমভাবে প্রাণীদের গায়েব হয়ে যাওয়া প্রশাসনিক গাফিলতি ছাড়াও অবৈধ উপায়ে বন্যপ্রাণী পাচারের একটি ইঙ্গিত হতে পারে।

    আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা অরুণ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, এই গণ্ডগোল দেখা গিয়েছে সঠিক গণনা না হওয়ার ফলে। চিড়িয়াখানার বার্ষিক রিপোর্ট এবং সিজেডএর বার্ষিক রিপোর্টের মধ্যে গরমিল রয়েছে। তাঁরা সঠিক তথ্য প্রকাশ করার চেষ্টা করছেন। এই যুক্তির উত্তরে শুভব্রত ঘোষ বলেছেন যে, এক বা দুই বছরের গরমিল মানা যায়, কিন্তু ৩০ বছর ধরে চলে আসা গরমিল মানা যায় না। বার্ষিক রিপোর্ট জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও আলিপুর চিড়িয়াখানার ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের বার্ষিক রিপোর্ট জমাই পড়েনি। ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা গিয়েছে আলিপুর চিড়িয়াখানায় এখন ১১৮৪টি প্রাণী রয়েছে।

    কিন্তু ২০২৪ সালে যেসব প্রাণী রয়েছে বলে তালিকায় নথিভুক্ত করা হয়েছিল, সেগুলির উল্লেখ ২০২৫-এর রিপোর্টে নেই। আবার চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা মানুষেরা যেসব ছবি এবং ভিডিও তুলেছেন তাতে আবার দেখা যাচ্ছে প্রাণীগুলি চিড়িয়াখানাতেই রয়েছে।

    চিড়িয়াখানার বিরুদ্ধে মামলায় আরও দাবি করা হয়েছে যে, প্রাণীদের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার পিছনে রয়েছে অন্য ষড়যন্ত্র। রাজ্য সরকার আলিপুর চিড়িয়াখানার আওতায় থাকা বেলভেডিয়ার রোডের একটি জমি কমার্শিয়াল ব্যবহারের জন্য বিক্রি করতে চলেছে। চিড়িয়াখানার প্রাণীর সঙ্গে সঙ্গে কমানো হচ্ছে জমিও। এভাবে ধীরে ধীরে জায়গাটিকে রিয়েল এস্টেটের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সিজেডএর গাইডলাইন অনুযায়ী কোনো চিড়িয়াখানায় ৭০০টির বেশি দেশি ও বিদেশি প্রাণী থাকলে তবে তাকে ‘লার্জ জু’ হিসেবে ধরা হয়। এখন আলিপর চিড়িয়াখানা প্রাণীসংখ্যার বিচারে আর ‘লার্জ জু’ নয়। তাই এটিকে এখন ‘মিডিয়াম সাইজ জু’ হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)