• ‘দোষ’ বাংলায় কথা বলা, মাসির বাড়ি ঘুরতে গিয়ে আটক কিশোর
    বর্তমান | ২৫ জুলাই ২০২৫
  • সংবাদদাতা, ইটাহার, হরিশ্চন্দ্রপুর,  গঙ্গারামপুর ও মালদহ: ক্রমশ চরমে পৌঁছচ্ছে বাংলাভাষীদের ওপর নির্যাতন। এমনকী, ছাড় পাচ্ছে না নাবালকরাও। হরিয়ানা পুলিসের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে সম্প্রতি তীব্র আতঙ্ক নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের এক কিশোর। এরই মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে। ম্যানহোল পরিষ্কারের কাজে গিয়ে হরিয়ানা পুলিসের হাতে আটক হয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুরের সাতজন বাসিন্দা। ফলে ক্ষোভ, আতঙ্ক এবং অসহায়তা ক্রমশ চেপে ধরছে ভিনরাজ্যে রুজির সন্ধানে যাওয়া দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারকে।

    ইটাহারের কেওটালের বাসিন্দা ইমরান হক (১৪) অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া। সে দুই সপ্তাহ আগে হরিয়ানার গুরুগ্রামে মাসির বাড়ি ঘুরতে যায়। সেখানে ইমরানের মাসি পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। গত ১৮ জুলাই মধ্যরাতে মাসির বাড়ি থেকে বাংলাদেশি সন্দেহে ওই কিশোরকে তুলে নিয়ে যায় হরিয়ানা পুলিস। রাতভর ইমরানের মাসি ও মেসো খোঁজ করেও তার কোনও খোঁজ পাননি। পরের দিন জানতে পারেন, ইমরানকে বাদশাপুর থানায় আটক করে রাখা হয়েছে। পরিচয়পত্র দেখালেও পুলিস তাকে ছাড়েনি। দেখা করতে দেওয়া হয়নি পরিজনের সঙ্গে। এমনকী ইমরানকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে পুলিস। পাঁচদিন অকারণে আটকে রাখার পর বুধবার রাতে হরিয়ানা পুলিস ইমরানকে ছেড়ে দেয়। ছাড়া পেয়ে ইমরান বলেছে, পুলিস এসে আমাকে মাঝরাতে মাসির বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। বাংলায় কথা বলাতেই বাংলাদেশি সন্দেহে তুলে নিয়ে যায়। খিদে পেলেও খেতে দেয়নি। বাংলাদেশে পাঠাবে বলে খুব ভয় দেখিয়েছে। আমি বাড়ি চলে যাব।

    গুরুগ্ৰামে হরিশ্চন্দ্রপুরের সাত পরিযায়ী শ্রমিককে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রেখে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে সেখানকার পুলিসের বিরুদ্ধে। এতে উদ্বেগ বেড়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের রাঙ্গাইপুর ঠাকুরটোলায়। সাত পরিযায়ী শ্রমিকের নাম পসেন দাস, অভিজিৎ দাস, আজমল হোসেন, লোকমান আলি, উসমান আলি, মনিরুল ইসলাম ও সাদিকুল ইসলাম। তিনদিন আগে তাঁরা হরিয়ানার গুরুগ্ৰামে ম্যানহোল পরিষ্কারের কাজে যান। বুধবার এলাকায় পৌঁছনোর পর রাতেই সেখানকার পুলিস তাদের বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। বৈধ কাগজ দেখানো সত্ত্বেও আটকে রেখে তাঁদের মারধর করে মোবাইল ফোন ও কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হয়। দুই ছেলে লোকমান আলি, উসমান আলির চিন্তায় ঘুম উড়ে গিয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরের আরমানি বিবির। দুই ছেলে সেখানে পুলিসের হাতে আটকে থাকায় কেঁদেই চলেছেন তিনি। বিধবা আরমানির কথায়, দুই ছেলে তিনদিন আগেই গুরুগ্রামে গিয়েছিল। যাওয়া মাত্রই বাংলাদেশি সন্দেহে তাদের আটকে রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে পরিযায়ী শ্রমিকদের ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তাজমুল হোসেন। 

    হরিরামপুর ব্লকের সাত শ্রমিকও হরিয়ানা পুলিসের হাতে আটকে রয়েছেন। মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র ও হরিরামপুর থানার যৌথ উদ্যোগে দু’জন ছাড়া পেলেও বাকি পাঁচজন এখনও আটকে।

    এদিকে, বাঙালি হেনস্তা নিয়ে শ্রমিকদের সাহায্য করার বার্তা দিয়েছেন মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। ফোনে তিনি বলেন, মালদহের যে পরিযায়ী শ্রমিকরা সমস্যায় পড়েছেন, তাঁদের পরিবার চাইলে আমি সমস্যা মেটানোর সবরকম চেষ্টা করব।
  • Link to this news (বর্তমান)